ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন কালীমন্দিরের সামনের সড়কে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় রাতেই দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় সাম্যের সাথে থাকা তার দুই বন্ধু বায়েজিদ ও রাফিও ছুরিকাঘাতে আহত হন। তারা সবাই একই ইনস্টিটিউট ও একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

সূত্র মতে, নিহত সাম্য, বায়েজিদ ও রাফি ৩ বন্ধু মিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালীমন্দিরের গেইট দিয়ে ভেতর থেকে মোটরসাইকেলে বাইরে বের হচ্ছিল। এমন সময় ভেতর থেকে তাদের সাথে বের হতে যাওয়া অন্য একটি বাইকের সাথে ধাক্কা লাগে।

এ ঘটনার জেরে বাকবিতন্ডায় জড়ান দুই পক্ষ। অপর পক্ষে যোগ দেন আরো ৩টি বাইকসহ প্রায় ১০ জনের একটি গ্রুপ। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ঢাবির এই তিন শিক্ষার্থীর উপর উপর্যুপরি হামলা চালায় বহিরাগত এই দুর্বৃত্তরা। সাম্যের পায়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের ফলে সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সাম্য৷ তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অন্য বন্ধুরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক জানান, সহপাঠীরা সাম্যকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারাল অস্ত্রের বেশ কয়েকটি আঘাত রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, দুইজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের ব্যাপারে অভিযান চলমান।

নিহত সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সিরাগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাসিন্দা ফখরুল আলমের ছেলে। সাম্য স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকও ছিলেন বলে ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে সাম্য হত্যার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঢাবি ক্যাম্পাসে। গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এছাড়া ভিসির সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেও দেখা যায় কতিপয় শিক্ষার্থীকে। রাতেই এক প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় নিয়ে অনতিবিলম্বে ঢাবি ভিসি ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

অন্যদিকে শিক্ষার্থী হত্যার বিচার না চেয়ে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে করা আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ছাত্রদল। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রদল এখানে লাশ নিয়ে নোংরা রাজনীতিতে মেতেছে। যেই হত্যাকাণ্ডে ভিসি কিংবা প্রক্টরের নূন্যতম ভূমিকা নেই সেখানে তাদের পদত্যাগ দাবি নেহাতই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতির অংশ।

ফেসবুক ভিত্তিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদে তন্ময় মিরাজ নামের এক শিক্ষার্থী ছাত্রদলের সমালোচনা করে লিখেন- আজকে ছাত্রদলের সুযোগ ছিলো! বিরাট সুযোগ ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে বিশাল মিছিল করার, প্রতিবাদ করার।

কিন্তু তারা বেছে নিলো নোংরা রাজনীতিটাই। স্লোগানে সাম্যকে তারা ছাত্রদলের বলে আওয়াজ দিলো, অথচ সাম্য ভাই আমাদের সবার। আমাদের সবার মানে ছাত্রদলেরও। কমন গ্রাইন্ডে এসে সবাইকে নিয়ে রাজনীতিটা করতে পারতো।

তারপর লাগলো ভিসি স্যারের পিছনে। স্যারের পদত্যাগ চায় ওনারা। আমার নিজের চোখে দেখেছি যখন ভিসি স্যারের পদত্যাগের স্লোগান উঠে পিছন থেকে আস্তে আস্তে মানুষ চলে যেতে শুরু করে। কারণ পুরো ঘটনায় এখনো সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসি স্যারের পদত্যাগ মতো কোনো কাজ দেখেননি। তাহলে তাদের এই দাবির সাথে কেনো থাকবে? এই যে শিক্ষার্থীদের পালস না বুঝে রাজনীতি করা, এটা থেকে কবে বের হবেন আপনারা?

আমি চাই আপনারা বুঝুন। খুব জলদি বুঝুন। এতে আপনাদেরই লাভ। আর আপনাদের পজিটিভ রাজনীতি মানে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও লাভ।বিষয়টা মাথায় রাখার অনুরোধ রইলো ছাত্রদলের চিন্তাশীল ভাইদের প্রতি। আজকের কাজগুলো দেখে আমি হতাশ।