বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি)-এর প্রায় ১৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই মামলায় তার স্ত্রীসহ মোট ১৬ জনকে আসামী করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক কমল চক্রবর্তী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় প্রায় ২০ কাঠা জমি ক্রয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট ‘আইআইইউসি টাওয়ার’ নির্মাণ করা হয়। ২০১১ সাল থেকে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ট্রাস্টের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে নামে দুদক।

অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ট্রাস্টের সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও তাদের কোনো বেতন, বোনাস, টিএ/ডিএ, লভ্যাংশ বা অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার বিধান নেই। কিন্তু আসামীরা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ট্রাস্ট আইনের বাইরে গিয়ে পরস্পর যোগসাজশে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১২ কোটি ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৬ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ২০০৪-এর ৫(২) ধারায় মামলা হয়েছে।

মামলার প্রধান আসামী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

নদভী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর আগে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিও তখন জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সংসদ সদস্য হওয়ার পর নদভী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং জামায়াত সংশ্লিষ্টদের ট্রাস্ট থেকে অপসারণ করেন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়টি আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে বলে জানা গেছে।

মামলায় আরও আসামী করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফকে।

এছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন— অধ্যাপক ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, চবি শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহর, ইঞ্জিনিয়ার রশিদ আহমেদ চৌধুরী, নদভীর স্ত্রী রিজিয়া সুলতানা, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের ভাই মোহাম্মদ খালেদ মাহমুদ, অধ্যাপক ফসিউল আলম, অধ্যাপক আবদুর রহিম, ড. মো. শামসুজ্জামান, মোহাম্মদ বদিউল আলম, ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মুহাম্মদ শফিউর রহমান, অধ্যাপক ড. মাহি উদ্দিন, অধ্যাপক আফজল আহমদ এবং ড. মোজাফফর হোসাইন নদভী।

এই মামলার বিষয়ে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে দুর্নীতির পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করা হয়েছে এবং আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।