স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ
গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি ও অর্থ আত্মসাৎ, কোচিং ও পরীক্ষা কেন্দ্র ফি তসরুফ, এমনকি স্কুল ভবনের একটি কক্ষ নিজের বোনের নামে অবৈধভাবে হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারিরা তাঁর অবিলম্বে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্কুলের অধীন তিনটি মার্কেটের ১৬১টি দোকান থেকে প্রাপ্ত ভাড়া ও পজিশন বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকা গোপনে তসরুফ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে গভর্নিং বডির ৪৯ নং সভায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সরেজমিন তদন্তে এবং দলিলপত্র যাচাইয়ে প্রায় ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
এছাড়া অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া স্কুল ভবনের প্রধান ফটকের পাশে একটি কক্ষ তাঁর বোনের নামে পজিশন হস্তান্তর করেন, কিন্তু সেই অর্থ প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা দেননি। একইভাবে অনুমোদনবিহীনভাবে পুরনো ভবনের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ করে দোকান পজিশনের অর্থও গোপনে আত্মসাৎ করা হয়।
শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, ২০২৫ সালের এইচএসসি কোচিং ফি ও এসএসসি-এইচএসসি কেন্দ্র ফি বাবদ সংগৃহীত ১৩ লাখ টাকাও আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। শিক্ষক-কর্মচারিরা আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধার এবং অধ্যক্ষসহ তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন গাজীপুর জেলা স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি। তিনি বৈষম্যবিরোধী একাধিক মামলার আসামি। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় অধ্যক্ষ পদে ফেরার জন্য তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রবীণ রাজনীতিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে অবিলম্বে অপসারণ না করা হলে এর দায়ভার বর্তমান গভর্নিং বডিকে নিতে হবে।
এদিকে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, “গভর্নিং বডির সভাপতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তে প্রায় ১৫ কোটি টাকার আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। আমরা ইতোমধ্যে আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।