খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদ‘র পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলা পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রধান ফটক সংলগ্ন কুয়েট উড পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এরপর সেখান থেকে তারা মশাল মিছিল সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে যেয়ে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে শেষ করে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ ব্যাজের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম, ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ জাহিদ ও একই ব্যাচের শিক্ষার্থী গালিব রাহাত।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সময় তারা অভিযোগ করে বলেন, বুধবার কতিপয় শিক্ষক আমাদের বিরুদ্ধে কর্মচারী কর্মকর্তাদের সাথে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আমাদের সংগ্রাম আমাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়। তারা আমাদের পিতৃতুল্য। আমাদের যদি ভুল হয়ে থাকে আপনারা আমাদের ক্ষমা করবেন। কিন্তু আমরা ব্যথিত আজ দুইমাস ধরেও আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মানববন্ধন করলেন না। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা হলো তাও আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করলেন না। আর এখন আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে কিভাবে গেলেন? যেখানে সারাদেশ আমাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে।
আমরা আরো দেখলাম আপনাদের সাথে একজন মো. আতাউর রহমান মোড়ল নামে ভাষণ দিলেন। যিনি বিএনপির ২০২৪ সালের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আপ্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। আবার একই সাথে বিএনপির যোগীপোল ইউনিয়নের ৩১ সদস্য কমিটির সদস্য। যেইখানে কর্মচারী কর্মকর্তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ সেইখানে সে এখনো কিভাবে চাকরিরত? আর যেই স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা আমাদের আক্রমণ করে। কার চক্রান্তে আমাদের শিক্ষকদের তাদের সাথে দাঁড়া করানো হয়েছে। আমরা তার জবাব চাই?
আমরা আরো দেখেছি শিক্ষকরা বলেন, যে বহিষ্কার হয়েছে সে তালিকা থেকে নাকি সবাই নির্দোষ প্রমাণ হলেও হতে পারে। তাহলে ৫৫ দিন ধরে তদন্ত কমিটি কী প্রহসনের রিপোর্ট বের করলো? আমরা চাই সে ৩৭ জনের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা হোক এবং এতে ছাত্রদলের শিক্ষার্থীরা ব্যতীত নিরীহ কেউ থাকলে তদন্ত কমিটি কেন তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করলো তার জবাব দিতে হবে।
আমরা তার সাথে সারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমাদের জন্য বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, ডি ইউ, সি ইউ, ব্রাক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়েছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের সংগ্রাম স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে। আমাদের বিশ্বাস পুরো দেশ জুলাই আগস্টের পর আর কোনো স্বৈরাচারকে ঠাঁই দিবে না।
কিন্তু আমরা ব্যথিত কারণ ৫৮ দিন পরেও ইন্টারিম আমাদের দিকে এখনো তাকাচ্ছে না। আমাদের ক্যাম্পাসে রামদা, চাপাতি এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে গুলী করা হলো তাও ইন্টারিম নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। আমাদের নামে মামলা বহিষ্কার হওয়ার পরেও তারা আমাদের দিকে তাকায়নি। যেই আসিফ মাহমুদের জন্য আমরা রাস্তায় নেমে রক্ত দিয়েছি। ওই আসিফ মাহমুদ আমাদের দিকে তাকান। আমরা কিন্তু এখনো রাজপথ ছাড়িনি। কোথায় মাহফুজ আলম? আপনারা দেখেন না আমার ভাইরা কুকুরের সাথে শুয়ে ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে। আমরা আপনাদেরকে হুঁশিয়ার করছি। আপনারা যদি এখনো আমাদের ভিসিকে অপসারণ না করেন তাহলে আমরা ধরে নিব সারা দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে ইন্টারিম স্বৈরাচারকে সেইফ গার্ড দিচ্ছে। আর স্বৈরাচার দমানোর জন্য আমরা প্রয়োজনে আবার জুলাই নামাবো।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের রেল ও সড়ক অবরোধ
রেললাইন ও সড়ক অবরোধ করে খুলনায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত নয়টার পর নগরীর বৈকালীস্থ খুলনা জংশনে রেললাইন এবং বৈকালীতে খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করার পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের ফলে বিকল্প সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও দুটি ট্রেন বিলম্বে ছাড়তে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের খুলনা স্টেশন মাস্টার জাকির হোসেন বলেন, অবরোধের ফলে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৪৫ মিনিট এবং চিলাহাটিগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস খুলনা স্টেশন থেকে এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট পর ছেড়ে যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ছয় দফা দাবি মানতে হবে। এর মধ্যে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্টের মাধ্যমে বাতিল করতে হবে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুবিধা বাতিল করতে হবে, উপ-সহকারী পাসকৃতদের সংরক্ষিত পদের বিপরীতে নিয়োগসহ ছয় দফার সকল দাবি মানতে হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন বলেও তারা জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও তারা উল্লেখ করেন। অবরোধ শেষে মিছিল সহকারে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এতে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।