প্রায় ৩৬ বছর পর আবারও নির্বাচনী আমেজে সরগরম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ১০টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেইঞ্জ’। প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন দলটির শাখা সভাপতি মো. তামজিদ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে শাখা ছাত্র মজলিশের সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি, এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে রোমান রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এছাড়া ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে আরেকটি প্যানেলও ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ভিপি পদে ফরহাদুল ইসলাম, জিএস পদে ইয়াসিন উদ্দিন সাকিব এবং এজিএস পদে শহীদুল ইসলাম শাহেদ লড়বেন।

এর আগে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, বামদের ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্যানেল, সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য স্বতন্ত্র প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতাত্ত্বিক ছাত্রফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন ‘দ্রোহ পর্ষদ’ নামে আরও আটটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়।

ভোটাররা বলছেন, শীর্ষ পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ চার প্যানেলের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর গত ৫৯ বছরে চাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৬ বার। সপ্তমবারের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ অক্টোবর। গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল।

নির্বাচন কমিশন সন্ধ্যা ৭টায় জানায়, ৯৩১ শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৪২৯, হল সংসদে ৩৫৬ জন।

চার প্যানেলের ভিপি-জিএস

গতকাল ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বরে প্যানেল ঘোষণা করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন। তিনি সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের মো. শাফায়াত হোসেন।

ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন। জিএস পদে লড়বেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সাঈদ বিন হাবিব। তাদের প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্যপদে লড়বেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আকাশ দাশ। তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী।

দুই বাম সংগঠনের ‘দ্রোহ পর্ষদ’ থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন নাট্যকলা বিভাগের ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক। এই প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের ইফাজ উদ্দিন। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক।

‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বাংলা বিভাগের ধ্রুব বড়ুয়া। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক। সম্প্রতি প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দাবিতে তিনি অনশন করেছিলেন। এ ছাড়া এই প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন বাংলা বিভাগের সুদর্শন চাকমা। তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক।

এসব প্যানেলের ভিপি ও জিএস প্রার্থীরা বলছেন, তারা ছাত্ররাজনীতির নতুন ধারা প্রবর্তন করতে চান। ছাত্ররাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, মাদক, হলের আসন-বাণিজ্যসহ যেকোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যেই কাজ করবেন।

নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, আগামী রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। তারপর সোমবার খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। এ ছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৯৩১ জন প্রার্থী

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শেষদিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন পদে মোট ৯৩১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (চাকসু) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪২৯ জন। অন্যদিকে হল সংসদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫০২ জন। ছেলেদের হলে মনোনয়ন দিয়েছেন ৩৫৬ জন, আর মেয়েদের হলে ১৪৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

হল ভিত্তিক মনোনয়ন জমা

আলাওল হলে ৩৩ জন, এফ রহমান হলে ৩৮ জন, শাহজালাল হলে ৩৬ জন, শাহ আমানত হলে ৪৩ জন, সোহ্রাওয়ার্দী হলে ৫৩ জন, শহীদ আব্দুর রব হলে ৩১ জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ৩৭ জন, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে ৪৭ জন, অতীশ দীপঙ্কর হলে ৩৮ জন, শিল্পী রশীদ চৌধুরী হোস্টেলে ২১ জন, শামসুন নাহার হলে ২২ জন, প্রীতিলতা হলে ২৬ জন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩১ জন, বিজয় ২৪ হলে ২৯ জন, নবাব ফয়জুন্নেছা হলে ১৭ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

চাকসু নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. আরিফুল হক সিদ্দিকী জানান, কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদে মোট ৯৩১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের দিন, যা পরিবর্তিত হয়ে রোববার ধার্য হয়েছে। প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের তারিখও রোববারের পরিবর্তে সোমবার নির্ধারিত হয়েছে। বাকি নির্বাচনী সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।