জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ -জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল ভোট বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে গতকাল বিকেল চারটার পর। এ সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন জনপ্রিয় লেখক, কলামিস্ট ও শিক্ষাবিদ আমিনুল ইসলাম। গতকাল নিজের ফেসবুক পেইজে দেয়া এক পোস্টে তিনি এই মতামত তুলে ধরেন। এখানে তার পোস্টটি তুলে ধরা হল:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে তো বিএনপিপন্থী শিক্ষক বলেই জানতাম। নাকি তিনি আসলে মনে মনে জামাত? এই যে ছাত্রদল আজকে ভোট বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে বিকেল চারটার পর। এটিকে পুরো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কোন চোখে দেখছে; ভেবে দেখেছেন কী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না হয় জামাতপন্থী ভিসি। জাহাঙ্গীরনগরে তো নিজেদের লোক থেকেও কিছু করতে পারছেন না। কেন পারছেন না? সব মিলিয়ে পাঁচটা শিক্ষার্থীও কি বলেছে তাঁদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছে? বলে নাই।

সেখানে সিসি ক্যামেরা আছে। সকল মিডিয়া আছে। আর জাহাঙ্গীরনগর কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। সেখানে সবাই সবাইকে চেনে। এটি একটি সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

কোন মিডিয়াও তেমন কিছু খুঁজে পায় নাই। একটা কথা বলি আপনাদের- আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখতে পায়। এটাই বাস্তবতা। দল হিসাবে বিএনপি এবং এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল দেউলিয়া অবস্থায় আছে। কিন্তু এরা বুঝতেও পারছে না।

আমার ধারণা তবুও আজকে জাহাঙ্গীরনগরে অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদল বেশি ভোট পাবে। কিন্তু রাজশাহী-চট্টগ্রামে কী অবস্থা হবে? সেখানে আপনাদের শোচনীয় পরাজয় হতে চলেছে।

দয়া করে ছাত্রদলের নামে আর কোন প্যানেল দিয়েন না। দিলেই হারবে। অন্য নামে নির্বাচন করুন। এর মূল কারন কী জানেন?

একটা বাস্তব উদাহরণ দেই। ২০১৬ সালে আমার এখানে বাংলাদেশ থেকে এক ছেলে পড়তে এসেছিলো। আমার সরাসরি ছাত্র। সে আমার ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে এখন একটা চাকরি করছে এখানে। এই ছাত্র ঘোর বিএনপি। বিগত আট বছরে যখনই ওর সাথে দেখা হয়েছে- সে বিএনপি ছাড়া আর কিছু বুঝেই না! এই ছেলে ২৪ এর আন্দোলনের পর দেশে গিয়েছিল।

ফিরে এসে দেখি ফেসবুকে নিয়মিত জামাতের আমীরের বক্তব্য শেয়ার করে! খুব অবাক হয়ে সেদিন জিজ্ঞেস করেছি

- ব্যাপার কী তোমার? জামাতের আমীরের বক্তব্য শেয়ার করছো যে?

ছেলে বিরক্ত হয়ে বলেছে

- দেশে গিয়ে যা দেখলাম! বিএনপি ভালো না। এর চাইতে জামাতই ভালো।

আমি কিন্তু একদম বাস্তব একটা উদাহরণ দিলাম। যেই ছেলের সাথে সাম্যবাদে বিশ্বাসী এই আমি গত আট বছর অনেক তর্ক করেছি বুর্জোয়াবাদের বিপক্ষে। যে ছেলে বিএনপি বলতে বলতে মুখে ফেলা তুলতো। সেই ছেলে দেশ থেকে ফিরে এসে এখন জামাতের আমীরের বক্তব্য শেয়ার করছে! সে মনে করছে- এর চাইতে জামাতই ভালো!!

আপনারা বুঝার চেষ্টা করুন- এই ছেলের বয়স ৩০। সে কিন্তু ধানেরশীষ-নৌকা এইসব বুঝে না। সে কিন্তু কোন রাজনীতিও করে না। স্রেফ সাপোর্টার। তাহলে এমন মানুষের সংখ্যা দেশে কী পরিমাণ আছে?

বিএনপি মহা-বিপদের মাঝে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা কিন্তু পুরো বাংলাদেশ থেকেই আসে। আপনারা আজকে ভোট বর্জন করলেও, আমি ধারণা করি জাহাঙ্গীরনগরে এখনও ছাত্রদলের কিছু পদ পাবার সম্ভাবনা আছে (নাও পেতে পারে)। আমার এসেমেন্ট বলছে- এক মাত্র জাহাঙ্গীরনগরেই ছাত্রদলের যা একটু সম্ভাবনা ছিল। অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাদের কোন রকম সুযোগ নেই। স্রেফ ভেসে যাবেন।

আর হ্যাঁ, এটাই এখনকার বাংলাদেশ। বিএনপি যদি এখনই না শুধরায়। এদের চাঁদাবাজ নেতাদের উৎখাত করে যদি সঠিক পথে না চলে। আর নীতি-আদর্শে ঠিক একটা জায়গায় স্থির না থাকে। এই দলটা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে; এরা কেউ বুঝতেও পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো তাও জগন্নাথ হলের সবগুলো ভোট পেয়েছেন। এরপর এটাও আর পাবেন না।

দুই দিন লেগেছে নেপালের তরুণদের আস্ত একটা রেজিমকে উৎখাত করতে। আর বাংলাদেশে যে তরুণরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভোট দিচ্ছে। এরা যদি সবাই জোট বাঁধে; আপনাদের উৎখাত করতে দুই ঘণ্টাও লাগবে না।

৫ আগস্টের ঠিক পর পরই এই দেশের মানুষের মন ভেঙে গেছে। যখন একজন সিএনজি ড্রাইভার দেখেছে- তাঁকে এখনো চাঁদা দিতে হয়। ট্র্যাক ড্রাইভার দেখেছে- চাঁদার পরিমাণ বেড়েছে। দোকানের মালিক দেখেছে - পাশের দোকানটা দখল হয়ে গেছে বিনা নোটিশে। তখনই এই দেশের মানুষ বুঝে গিয়েছে - এরা এসেছে লুটপাট করতে। কোন কিছুই বদলাবে না।

বিএনপি যদি এই স্বভাব পরিবর্তন করতে না পারে। যদি ক্ষমতায় কোন ভাবে চলেও যায়। ছয় মাস থেকে এক বছরের মাথায় আপনাদেরকে এই শিক্ষার্থীরাই উৎখাত করবে (আদৌ যদি যেতে পারেন আরকি!)

শুধরান। মানুষের কথা শুনেন। দলের পরামর্শক বদলান। আমি ধারণা করছি- এরা অন্য দলের হয়ে কাজ করছে। একদম নতুন সেট-আপ আনুন। যারা গতিশীল এবং নির্মোহ ভাবে পরামর্শ দিতে পারবে। যারা শুধু সহমত ভাইদের কাছ থেকে প্রশংসা শুনে বেড়ায় না। মুদ্রার অপর পিঠটাও দেখতে পারে। যেই ভাব নিয়ে আপনাদের নেতা-কর্মীরা আজকাল চলা-ফেরা করছে। এমন ভাব আগের বুর্জোয়া দলটাও দেখাতো।

আবারো বলছি- নীতি আদর্শে এক জায়গায় স্থির থাকুন। আপনারা দুই নৌকায় পা দিয়েছেন। আমার বাবা বলতেন- দুই নৌকায় পা দিলে ডুবে মরতে হয়।

যদি না শুধরান; আপনাদের জায়গা কই হবে; সেটাও নির্ধারণ করে রাখেন। আগের বুর্জোয়া দলটা তো ভারতে পালিয়ে যেতে পেরেছে। আপনারা কই যাবেন? বঙ্গোপসাগরে? নাহ, আপনাদের একটাই জায়গা- বাংলাদেশ।

তাই বাংলাদেশকে ধারণ করুন। বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন।

আমিনুল ইসলাম: প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি