ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে সব প্রার্থীকে ভালো কাজের প্রতিযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। শনিবার বিকেলে ডাকসু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ আহ্বান জানান তিনি। সাদিক কায়েম বলেন, প্রতিপক্ষরা আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে ক্রমাগত আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। আমাদের বোনদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং করছে। আমরা তাদের আহ্বান জানাবো, আসুন আমরা ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করি। মেধার প্রতিযোগিতা করি, নতুন আইডিয়া জেনারেট করি।
শিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গ করার পরও নির্বাচন কমিশন একটা পক্ষকে ফেভার দিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের এ ধরনের আচরণের শঙ্কিত। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, একটা পক্ষ-শিক্ষার্থীরা কেন ভোট দেবে সেটা না বলে আমাদের কেন ভোট দেবে না সেটা বলে বেড়াচ্ছে। এ ধরনের কাজে তাদের দৈন্যদশা প্রকাশ পাচ্ছে।
এদিকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা। শনিবার ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
বিন ইয়ামিন বলেন, ঢাবি প্রশাসন এখন নানান কৃত্রিম সংকটের মধ্য দিয়ে ডাকসু নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি প্রার্থীদের ছবি ও নাম হালনাগাদ করার জন্য। কিন্তু তারা বলছে এটা নিয়ে অনেক সমস্যা হবে। আমাদের বিশাল একটা ভোটার অনাবাসিক শিক্ষার্থী। আমরা যখন দাবি নিয়ে প্রশাসনের কাছে গেলাম, তারা বলছে হলকার্ড হালনাগাদ না করলে ভোট দিতে পারবে না।
ঢাবি ভিসির বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার পথে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের কাছে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চান। উপাচার্য এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেন।
কিন্তু কয়েকটি গণমাধ্যম ‘ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দায়িত্ব ছেড়ে সব বলে দেব: ঢাবি ভিসি ড. নিয়াজ আহমদ খান’ শিরোনামে উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপাচার্যের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য এ বিষয়ে উপাচার্যের সেই বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, ‘ডাকসুর আয়োজন যেকোনো বিবেচনায় চ্যালেঞ্জিং। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি, সবার জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করে এগিয়ে যেতে। প্রতিনিয়ত কাজ করছি। গতকাল রাতেও ইলেকশন কমিশন, সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমসহ সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম, হল প্রভোস্টরাও ছিলেন। সমস্যা সমাধানে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। বড় দাগে যে কনসার্নগুলো এসেছে, সেগুলোকে আমরা এক এক করে এড্রেস করার চেষ্টা করছি।
‘নিখুঁত পরিবেশ আপেক্ষিক একটি বিষয়। এটা চলমান। ৯-১০ মাস ধরে সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমরা সবাই মিলে মাঠে নেমেছি। সমস্যা আসছে, সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ছাত্রসংগঠনগুলো যে আচরণ করেছে তাতে আমরা আশাবাদী। অনেক রকম নিজস্ব মতভেদ, মতানৈক্য সত্ত্বেও তারা মোটা দাগে ডাকসুতে অংশ নিচ্ছে। আনন্দ ও উদ্দীপনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
‘এটা আমাদের বিরাট একটা শক্তি। এটি এককভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বা একক কোনো মহলের বিষয় না। এই আয়োজনে যতক্ষণ সবাই আমার হাত ধরবেন, ততক্ষণ আমি মাঠে থাকব। যেখানে আমার হাত ছেড়ে দেবেন, আমি পরিষ্কার আপনাদেরকে ডেকে বলে দেব যে, এই জায়গাতে আমার বাধা হচ্ছে। এটি একটি জাতীয় দায়।
যদিও এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠান, কিন্তু পুরো জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা আমাদের কৃতজ্ঞতা। এই দায় কোনো ব্যক্তিগত দায় নয়। এটি একটি কালেকটিভ রেসপন্সিবিলিটি। ছাত্রদের ব্যাপক আগ্রহ ও দাবির প্রেক্ষিতে আমরা মাঠে নেমেছি। আমরা মোটামুটি ভালো পরিবেশ রাখার জন্য যা উদ্যোগ সেটি আপনাদেরকে প্রত্যেক তিন-চার দিন পরপর আপডেট আকারে জানিয়ে দেব।
‘এই মুহূর্তে আমরা জানি সাংবাদিকদের অনেক তথ্যের প্রয়োজন। নিয়মিতভাবে আপনাদের তথ্য জানানো হবে। ইলেকশন কমিশন আমাদের যেভাবে গাইড করবেন, আমরা সেভাবে কাজ করবো। আমরা এখন মূলত ইলেকশন কমিশনের অধীনে কাজ করছি। প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তাদের যেকোনো ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন’ ‘আমার কথা পরিষ্কার, সকল অংশীজনের সঙ্গে ৭০টির বেশি মিটিং-আলোচনা করে আমরা এতটুকু এগিয়েছি। সবাই যতক্ষণ আমার সাথে থাকবেন, ততক্ষণ এ প্রক্রিয়া চলবে। যখন আপনি হাত ছেড়ে দেবেন, আমি সবাইকে ডেকে এনে কোন পর্যায়ে আছি সেটা আপনাদেরকে জানিয়ে দেব। এমতাবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাবি প্রশাসন।