সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া একটি ঐতিহ্যের স্মারক। এটি কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং উপমহাদেশের মুসলিম সমাজের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ সংস্কার ও জাতীয় জাগরণের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায় বলে উল্লেখ করেছেন ধর্মউপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকায় সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার সভাকক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধর্মউপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ধর্মউপদেষ্টা বলেন, আড়াইশো বছরের আমাদের ইতিহাসের পথপরিক্রমায় আলিয়া পদ্ধতির মাদরাসার অবদান সোনার অক্ষরে লিখে রাখার মতো। মাদরাসা-ই-আলিয়া থেকে ডিগ্রি অর্জন করে হাজার হাজার ছাত্র আমাদের সচিবালয়, সেনাবাহিনী, প্রশাসনযন্ত্র, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। এ মাদরাসার অবদান অবিস্মরণীয়। এখান থেকে অনেক যোগ্য ব্যক্তি তৈরি হয়েছে। ধর্মউপদেষ্টা আরো বলেন, ঢাকা আলিয়া যুগ যুগ ধরে এই সমাজ, এই রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আগামীতে এ প্রতিষ্ঠান দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি ছোট ছোট মতপার্থক্য ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান। মাদরাসা-ই-আলিয়া থেকে ঐক্যের বাতাবরণ ছড়িয়ে পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উপমহাদেশে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনালগ্নের ইতিহাস তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, অনেক চড়াই-উৎরাই, ত্যাগ-কুরবানির মাধ্যমে আলিয়া পদ্ধতির মাদরাসার অভিযাত্রা শুরু হয়। ইংরেজরা এটাকে ভালোভাবে দেখেনি, তারা সিলেবাসকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারপরও সে সময়ের ওলামায়ে কেরামরা দ্বীনি শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। উপদেষ্টা তদানীন্তন দ্বীনদার মুসলমান, উলামায়ে কেরামদের অবদানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
ড. খালিদ আরো বলেন, কলকাতা আলিয়া মাদরাসা যখন পরিপূর্ণভাবে চালু হয় তখন ইংরেজরা প্রস্তাব দিলেন একজন ইংরেজকে এ মাদরাসার প্রিন্সিপাল নিয়োগ দিতে হবে। এটা না হলে মাদরাসা চালু করতে দেয়া হবে না। সেসময়কার উলামায়ে কেরামরা এটা মেনে নিলেন, বিপদে পড়ে। এটা না করলে মাদরাসা টিকে থাকতো না। মাদরাসা না থাকলে আমাদের মাথায় টুপি, দাঁড়ি, তাহজিব, তমুদ্দুন, ধর্ম, মূল্যবোধ সবকিছু বিসর্জন যাবে। মাদরাসাই এই মূল্যবোধ টিকিয়ে রেখেছে।
উপদেষ্টা বলেন, আমি নিজে মাদরাসার ছাত্র। আমার প্রথম তালিম আলিফ, বা, তা, ছা। আমি পিএইচডি ডিগ্রি পর্যন্ত অর্জন করেছি। মাদরাসাই আমার ভিত্তি। আমি মাদরাসায় পড়েছি, এটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। এরপর আমি যে সাধারণ শিক্ষা অর্জন করেছি সেটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। উপদেষ্টা আরো বলেন, অতি আধুনিক বিষয়ের ভারে মাদরাসা শিক্ষার যে ঐতিহ্য কুরআন, হাদীস, ফিকহ প্রভৃতি কোণঠাসা হয়ে গেছে। আমরা অবশ্যই আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করবো। তবে মাদরাসা শিক্ষা হচ্ছে বিশেষায়িত শিক্ষা। মাদরাসা হলো আলেম তৈরির কারখানা। তিনি মাদরাসাতে আরবি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ জানান। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। অন্যান্যের মধ্যে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মাদরাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ওবায়দুল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।