ইবি সংবাদদাতা : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং ‘জুলাই বিপ্লবের’ আকাক্সক্ষার আলোকে ক্যাম্পাস সংস্কারের দাবিতে ‘জুলাই দ্রোহের মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল শনিবার বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের ব্যানারে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়ামোড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসে শেষ হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুফ আলী।

এসময় শিবির নেতাকর্মীদের- “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার”, “ইসলামী ছাত্রশিবির, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ”, “যদি না হয় সংস্কার, এই প্রশাসন কি দরকার!”, “করতে সনদ উত্তোলন, শিক্ষার্থীদের যায় জীবন”, “ইবিতে ছাত্রসংসদ, চালু করো, করতে হবে” ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহা. মাহমুদুল হাসান বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি রিজিমের পতন হয়েছিল, সেই বিপ্লবের আজ এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য সংস্কার আমাদের চোখে পড়েনি। আমরা ভেবেছিলাম, জুলাইয়ের পরে আর আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হবে না, আমরা আমাদের কথা বলার অধিকার পাবো, স্বৈরতান্ত্রিক কবল থেকে মুক্তি পাবো, সার্টিফিকেট উত্তোলনে কোনো ভোগান্তি হবে না, নাপা কেন্দ্র সংস্কার করা হবে, ওলিউল্লাহ-মোকাদ্দাস ভাইকে ফেরত দেয়া হবে- কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব বিষয়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোই দৃশ্যমান পদক্ষেপ বা সংস্কার করতে পারেনি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটাই মধ্য দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছে।”

সভাপতি বলেন, “আমরা দেখেছি, একটা ক্যাম্পাস কতটা অনিরাপদ হলে আমার ভাই সাজিদ মারা যায়Í এটার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না; প্রশাসন দিতে পারেনি। আমরা কিভাবে বলবো এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জন্য নিরাপদ?

সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে তিনি বলেন, “যদি আপনারা শিক্ষার্থীদের ভালোবাসেন, এটা প্রমাণ করতে চান- সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দ্রুত নিশ্চিত করুন। যদি তদন্ত সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করতে না পারেন, শিক্ষার্থীরা যা করার তাই করবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংস্কার দাবিগুলো বাস্তবতানে পদক্ষেপ নেই অভিযোগ তুলে শিবির নেতা বলেন, “আমরা ছাত্রশিবির বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। আমরা ১১০টা দাবি দিয়েছি- কিন্তু প্রশাসন ছয়-নয় করেছে। দাবি কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে এমন খুঁজতে গেলে দেখা যাবে ৩৩% হবে না, এখানেও প্রশাসন ফেল। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি- প্রশাসনে ছাত্রদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করুন। ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম ছাত্র সংসদ, ইকসু। আমরা আজকের এই সমাবেশ থেকে ইকসু গঠনের জোর আহ্বান জানাচ্ছি। এটা শুধুমাত্র ছাত্রশিবিরের দাবি নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর দাবি। যদি ছাত্র সংসদ গঠন করা না হয়, তবে আমরা যে কর্মসূচি দেওয়া লাগে, সেই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো- তারপরও ছাত্র সংসদ ইকসু আদায় করে ছাড়বো।

পরিশেষে প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন যদি এই প্রশাসন ঘটাতে না পারে, আমরা মনে করি এই প্রশাসন ব্যর্থ- এমন প্রশাসনের দরকার আমাদের নেই। যারা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন দেখাতে পারবে, শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে পারবে- শুধুমাত্র তারাই থাকুক, বাকিরা আল্লাহর ওয়াস্তে চলে যান, আমাদের আর কষ্ট দিয়েন না।”