জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক-জব্বার হল সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনায় একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

অভিযুক্ত আরফুর সাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৫২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী । তিনি দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

ভুক্তভোগী তানজিম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৫৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী  এবং শহীদ রফিক জব্বার হল সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী।

অভিযুক্ত আরফুর সাদী ও ভুক্তভোগী তানজিম হোসেন উভয়ই রফিক জব্বার হল সংসদ নির্বাচনে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী তানজিম হোসেন। অভিযোগপত্রে তিনি নির্বাচনী আচরণবিধির ধারা ১৩ (ক) ও (খ) লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযুক্ত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ও নির্বাচনী প্রচারণায় প্রশাসনিক নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানান।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, নির্বাচন করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর গণতান্ত্রিক অধিকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এই অধিকার প্রয়োগ করছি। কিন্তু গত ২০ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০ টার সময় আমাকে হলের কমন রুমে ৫২তম আবর্তনের কিছু ভাই ডাকেন। সেখানে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আরিফুর রহমান (জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, ৫২তম আবর্তন) আমাকে নানা ধরনের চাপ ও ভীতিকর মন্তব্য করেন। তিনি আমাকে বলেন, আমি নাকি নির্বাচন করার কোনো অনুমতি নিয়েছি কিনা, তারা ৫৩তম আবর্তনকে কোনো পদ নিতে দেবে না, আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা আমার জন্য ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক হবে।

অভিযোগপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট একটি ফেক জিমেইল আইডি থেকে আমার ইমেইলে ওই দিনের ঘটনার অডিও ক্লিপটি আসে, যেখানে উপরোক্ত হুমকিমূলক মন্তব্যগুলো স্পষ্টভাবে শোনা যায়। এই ঘটনার পর থেকে আমি মানসিক চাপে আছি এবং নিজের জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আরিফুর সাদি বলেন, “সেদিন আসলে আমরা আমাদের হলের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার জন্য বসেছিলাম। এরপর আমরা আমাদের

ইমিডিয়েট জুনিয়র ৫৩ ব্যাচের সাথেও বসি। তাদের সাথে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তো হুমকি নয়, বড় ভাই হিসেবে পরামর্শ দিয়ে বলেছি যে, ‘দেখো তোমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো তা তোমাদের নিজেদের জন্য ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে তোমরা বিভিন্ন পদে দাঁড়াতে পারো, এতে নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য হবে না।’

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার অডিও ক্লিপটিতে পুরো আলোচনার রেকর্ড না দিয়ে শুধু আমার বক্তব্যকে কাটছাঁট করে ফেসবুকে পোস্ট করে আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার দাবি, সেই অডিওর মেটা ডাটা এবং সম্পূর্ণ অডিও ক্লিপ প্রকাশ করতে হবে‌। এছাড়া ওই অভিযোগকারী শিক্ষার্থী ছাত্রদলের সাথে যুক্ত বলে জানতে পেরেছি, আমি নিজেও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আজ নির্বাচন কমিশন থেকে আমার কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রাখতে চাই।

এ বিষয়ে রফিক জব্বার হল সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া জানান, “এ বিষয়ে একটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগটি প্রক্রিয়াধীন আছে, আমরা বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে ঘটনার শুনানি নিচ্ছি।”