দরজায় কড়া নাড়ছে ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে দলমত নির্বিশেষে প্রচার-প্রচারণা। ভোটারদের মন জয় করতে নানা কায়দায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। কেউবা দিচ্ছেন ভিজিটিং কার্ড, কেউবা চিঠির খাম, কেউ হ্যান্ডবিল কেউবা লিফলেট। তবে একজন রীতিমতো ‘লিগ্যাল নোটিশ’ দিয়েও নজরে এসেছেন শিক্ষার্থীদের।

দেখা গেছে, নির্বাচনে প্রার্থীরা নানা কায়দায় তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ টাকার বা ডলারের আদলে হ্যান্ডবিল বানিয়ে রুমে রুমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, কেউ বা গানে গানে নিজের প্রচারণা চালাচ্ছেন, ফুটপাতে নিজের ব্যালট নাম্বারের সাথে গেঞ্জির দাম মিলিয়েও প্রচারণা করতে দেখা গেছে একজনকে, কবিতা আবৃত্তি, ভিজিটিং কার্ড তৈরি করেও প্রচারণা করছেন অনেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রচারণা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রতিরোধ পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু। গতকাল তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই অবস্থায় মেঘমল্লারকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান তার প্রতিদ্বন্দ্বী, ছাত্রশিবির মনোনীত জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ।

গতকাল বুধবার মেঘমল্লারকে দেখতে যান ফরহাদ। বের হয়ে একটি ছবি শেয়ার করে, সেখানে ক্যাপশন দিয়েছেন- মেঘ দা, আপনি সুস্থ হয়ে দ্রুতই রাজনীতির ময়দানে ফিরে আসুন।আমাদের মাঝে মতের বৈচিত্র্য থাকবে, আদর্শের ভিন্নতা থাকবে কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবার লড়াইটা আমাদের সবার। মেঘমল্লার বসু দাদার পূর্ণ সুস্থতা কামনা করছি।

এর আগে মেঘ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, ‘যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই সত্য হলো। শরীর বিট্রেই করল। আজ রাতে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন। সশরীরে আর মনে হয় ক্যাম্পেইন করতে পারব না। সরল অপারেশন এমনিতে। কিন্তু ডাক্তার কোনোভাবেই দেরি করতে রাজি নন। অবস্থা নাকি ইতিমধ্যেই বেশ খারাপ। রাজনৈতিক শত্রু মিত্র সকলের দোয়া, আশীর্বাদপ্রার্থী।

এবার টাকার আদলে লিফলেট ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছেন মোহতাসিম বিল্লাহ হিমেল। এছাড়াও আরাফাত নামক এক প্রার্থীও আলোচনায় আসেন এমন অভিনব প্রচারণার জন্য। আরাফাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাদা-কালো এ নোটের এক পিঠে দেওয়া হয়েছে একটি কিউআর কোড, যেটি স্ক্যান করলেই পাওয়া যাচ্ছে প্রার্থীর ইশতেহার।

এবছর ভিন্ন কায়দায় প্রচারণা চালিয়েছেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী ইব্রাহীম আদল। তিনি আসিফ নজরুলের ‘আমি যদি কোনোদিন কোনো মন্ত্রণালয় বা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেতাম, জীবন দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করার জন্য কাজ করতাম’Ñকথা সংবলিত ভিডিওটি নকল করেছেন। জারি গান গেয়ে নিজের ইশতেহার তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়ছেন। ডাকসু নিয়ে ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালাতেই গান গেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

অভিনব আরেকটি প্রচারণার নজির দেখিয়েছেন জহিন ফেরদৌস জামি। তিনি ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। জামি প্রচারণায় যুক্ত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা খেলোয়াড়দের। তার পক্ষে প্রচারণা করেছেন জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় মুরসালিন, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তৌহিদ হৃদয়, তানজীম হাসান সাকিব, মাহমুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসাইন ইমন এবং বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাপ্টেন প্রান্তিক নওরোজ নাবিল।

এসব প্রচারণায় শিক্ষার্থীরা খুশি হচ্ছে এবং তাদের গ্রহণ করছেন বলে মনে করছেন প্রার্থীরা। তারা বলছেন, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে প্রচারণায় নতুনত্ব আনায় ভোটাররা তাদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন। প্রার্থী মোহতাসিম বিল্লাহ হিমেল বলেন, গতানুগতিক ধারার লিফলেট ভোটাররা পড়ছে না। আমি নির্বাচিত হলে কী করবো, তা যদি মানুষ না জানে, তাহলে এটা তো ঝামেলার। সে কারণে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি।