রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করে বৈচিত্র্য এনেছে রাবি ইসলামী ছাত্রশিবির। এতে নিজেদের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাবেক জুলাই যুদ্ধে আহত শিক্ষার্থী রয়েছেন। তেমনি ভিন্ন মতাদর্শ ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীসহ ‘ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীরা এই প্যানেলে স্থান পেয়েছেন। এদিকে রাবি উপাচার্য (ভিসি) বলেছেন, ‘হারলেই খেলা ভালো হয়নি, এমন বাজে আচরণ দুনিয়াতে আর নেই।’

শিবিরের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল : রাকসুতে এবার শিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামের প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে শিবিরের রাবি শাখার সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ (ব্যালট নং ০৪), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাবি’র সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা (ব্যালট নং ১০) এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী সালমান সাব্বির (ব্যালট নং ১৫) প্রার্থী রয়েছেন। এই প্যানেলে ব্যতিক্রম হিসেবে জুলাইয়ে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুব ও সনাতন ধর্মাবলম্বী সুজন চন্দ্রকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। প্যানেলে নারী প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। নির্ধারিত দুই নারী পদ ছাড়াও সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়বেন একজন নারী। এ বিষয়ে রাবি শাখা শিবিরে সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থ্যানের পর শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তারা যোগ্য শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব চায়। আমরা আমাদের প্যানেল গঠনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবিকে প্রাধান্য দিয়েছি। প্রতিটি পদের জন্য ক্যাম্পাসের সবচেয়ে যোগ্য শিক্ষার্থীদের আমরা আহ্বান করেছি। অনেকেই সাড়া দিয়েছেন। সেই যোগ্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের প্যানেল সাজিয়েছি। শিবির করুন বা না করুন, দক্ষতা, যোগ্যতা ও নেতৃত্বগুণ দেখেই প্যানেলে স্থান দেয়া হয়েছে।” বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আঁখি আফরোজা বলেন, “শিবির ডাকসু ও জাকসুর মতো রাকসুতেও বৈচিত্র্যময় প্যানেল ঘোষণা করেছে। নারী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিবির সম্পর্কে আগে যে ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠিত ছিল তা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। নারী শিক্ষার্থীরাও এখন শিবির সমর্থিত প্যানেলের বিষয়ে ইতিবাচক ভাবমূর্তি পোষণ করছে।” উল্লেখ করা যেতে পারে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরুর পর রাবিতে ১৯৮০, ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সাল- এই তিনটি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৪২ জন : রাকসু’র হল সংসদ নির্বাচনে এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৪২ জন প্রার্থী। ছাত্রীদের ছয়টি হলের তালিকায় দেখা যায়, এসব হলের বিভিন্ন পদের মধ্যে ২৬টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা। এছাড়া জুলাই-৩৬, বেগম রোকেয়া ও রহমতুন্নেসা হলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ৪টি করে পদ থাকলেও প্রার্থী হয়েছেন ৩ জন করে। এতে হলগুলোর এই পদে ১টি করে পদ ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া খালেদা জিয়া হলের সহ-বিতর্ক ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। এছাড়া ছেলেদের বিজয়-২৪ হলে ৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

হারলেই খেলা ভালো হয়নি, এটা অগ্রহণযোগ্য : রাবি উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, “আমরা যারা প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছি তাঁরা কারসাজির ‘ক’-ও বুঝি না। আমি আমার সারাজীবনে কোনো কারসাজি করিনি এবং ভবিষ্যতেও কোনো কারসাজির সঙ্গে যুক্ত হবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। কাজেই এই আস্থাটি আপনারা রাখতে পারেন।” গতকাল সোমবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ‘রাকসু কি এবং কেন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, “আমরা সবার সহযোগিতায় একটি সুন্দর পরিবেশে আগামী ২৫ তারিখ রাকসু নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। আমরা সকলের মতামত দাবি দাওয়া বাধা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই পর্যন্ত এসেছি। আমাদের মূল দায়িত্ব একটি সুন্দর পরিবেশে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেয়া এবং ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন অনুষ্ঠিত করা।” তিনি আরো বলেন, “কোথাও জিততে গেলে হারতে শিখতে হয়। যিনি হেরে যান তিনি এইটা-সেটা বলে পরিবেশ নষ্ট করাটা আমাদের একটি জাতীয় প্রবণতা। হারলেই খেলা ভালো হয়নি, এমন আচরণ থেকে বাজে আচরণ দুনিয়াতে আর একটাও নেই। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তোমরা নির্বাচনে আচরণবিধিগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।” সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান। প্রধান আলোচক ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. নিজাম উদ্দীন ও অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ। কী-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মো. সেতাউর রহমান।

রাবিতে ২ দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা : রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা ও অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে। এছাড়া অতি জরুরি বিভাগসমূহ যথাÑ পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, প্রহরা ব্যবস্থা, টেলিফোন যথারীতি চালু থাকবে। প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য অফিস খোলা থাকবে।