ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড.মাহবুবুর রহমানকে বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইবি শাখা ছাত্রশিবির । রবিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবন চত্বরে সমাবেশে সমবেত হন। মিছিলে তারা ‘আওয়ামীলীগের ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘মাহবুবরের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ‘ বহিষ্কার বহিষ্কার, মাহবুবর বহিষ্কার’, ‘মাহবুবরের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালেসহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
এসময় তারা ‘ইবিতে ভিন্ন মত দমাতে জঙ্গি নাটক সাজাতেন ড.মাহবুব’ শিরোনামে আজকের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরটির ফটোকপি বিলি করে আওয়ামী শাসনামলে সাজানো ক্রসফায়ার, তথাকথিত জঙ্গি নাটক, বিরোধী মতের দমন-পীড়ন এবং শিক্ষার্থীদের হয়রানির মূল হোতা হিসেবে প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমানকে অভিযুক্ত করে তার বহিষ্কারের দাবি জানায়।
এছাড়াও সাজিদ হত্যার বিচার, দ্রুত ছাত্রসংসদ চালু, ক্যাম্পাস ডিজিটালাইজেশন, নাপা সেন্টার খ্যাত মেডিকেল সেন্টারের দ্রুত সংস্কার, হলের খাবারের মান নিশ্চিত করন, মেধার বিবেচনায় হলে আবাসন নিশ্চিত করন ও বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিকীকরণ করার দাবি জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্থবিরতা ও নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
শাখা শিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আওয়ামী শাসনে যারা ছাত্রদের উপর নির্যাতন করেছে, তাদের খতিয়ান আমাদের সামনে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। সাবেক প্রক্টর মাহবুবকে আমরা কখনো শিক্ষকের পরিচয়ে পাই নাই। আমরা দেখেছি আমার বোনকে পর্দা করার কারণে জঙ্গি সাজিয়ে হয়রানি করা হয়েছে, নিরাপরাধ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হল থেকে ধরে নিয়ে জঙ্গি বানিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া। ইসলামী শিক্ষাকে ধ্বংস করবার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেছে, মক্তবকে বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদেরকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ার পর্যন্ত দেয়ার জন্য চোখে কালো কাপড় বেঁধে তিন দিন পর্যন্ত কালো কাপড় বেঁধে রেখেছিল। শুধু উদ্দেশ্য ছিল মিথ্যা সাক্ষী নেয়া যে অপরাধ ছাত্রশিবির করেছে।
তিনি আরো বলেন, “গত শাসনামলে আমরা দেখেছি শিক্ষক রাজনীতির নামে শুধুমাত্র চেয়ার দখলের জন্য নোংরামি হয়েছে। সেসময় প্রক্টর মাহবুব বাদী হয়ে ৭০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা যে মামলা করেছিল, হয়েছে। সেই মামলা এখনো ডিসমিস হয় নাই। ১৮ সালে যখন কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়, সেই আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য ছাত্রদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছিলোÑ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু গুমের ঘটনা হয়েছে। তোমরাও কিন্তু যদি বেশি আন্দোলন কর, গুম করে ফেলব।” এরকম হুমকি যারা শিক্ষার্থীদেরকে দিকে পারে তারা কিভাবে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে? প্রশাসনকে বলি, যদি এই সমস্ত সন্ত্রাসীদেরকে বিচার না করেন, সাজিদের মত আরও হত্যাকাণ্ড হয়তো হয়ে যেতে পারে। ছাত্রদের পিছনে কলকাঠি তারাই নাড়ছে। শিক্ষার্থীরা তথাকথিত শিক্ষক নামক সন্ত্রাসীদের কাছে অনিরাপদ। এই সন্ত্রাসীদেরকে আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না।
সবশেষে তিনি বলেন, “আবারও বলছি, প্রক্টর মাহবুব, তারা যে নোংরামি রাজনীতি করে আসছে সেটার বিচার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে, সেটা আপনাদের করার দায়িত্ব, এটা নিশ্চিত করুন। ঠিক। তাকে অতি দ্রুত বহিষ্কার করুন এবং আগামীতে চেয়ারের জন্য কোনো আদর্শকে নিপীড়ন করে বড় একটা চেয়ার পাবে, সেই মানসিকতা যে শিক্ষকগুলো লালন করে, তাদেরকে এখনই ফাইন্ড আউট করুন। ফাইন্ড আউট আপনারা করতে না পারলে আমরা করব এবং তাদেরকে বয়কটের ঘোষণা করব।”
অভিযোগের বিষয়ে ড. মাহবুবর রহমান বলেন, “এসব অভিযোগ আমার স্মৃতির বাইরে। হঠাৎ এসব অভিযোগ উত্থাপনের পেছনে একটি বিশেষ টার্গেট রয়েছে বলে অনুমাণ করতে পারছি। আপাতত বলবো না, সময় হলে জাতির কাছে প্রকাশ করবো।”
উল্লেখ্য, ইবির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান আওয়ামী আমলে ক্যাম্পাস নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর। সেসময় সে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্রসফায়ার পরিকল্পনা, তথাকথিত জঙ্গি নাটক, বিরোধী মতের দমন-পীড়ন এবং শিক্ষার্থীদের হয়রানি করে বলে অভিযোগ। রাজনৈতিক দমন-পীড়নের ভয়ে চুপ থাকলেও অভ্যুত্থান পরবর্তীতে প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী এবং তৎকালীন দায়িত্বরত ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সুত্রে পুনরায় বিষয়টি সামনে আসলে সমালোচনার ঝড় উঠে।