# পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রার্থীদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে টাঙানো ব্যানার, ফেস্টুন ও বোর্ড সরিয়ে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের কর্মচারীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে চিফ রিটার্নিং অফিসারের সই করা 'অতি জরুরি' বিজ্ঞপ্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে সব ব্যানারফেস্টুন সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগই সরায়নি। পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বুধবার দুপুরে সেগুলো নামিয়ে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, টিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে, ভিসি চত্বর, মল চত্বর, চারুকলা ও কার্জন হল এলাকায় গতকাল থেকে বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারফেস্টুন দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য, প্রতিরোধ পর্ষদ, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীদের ছবিসহ ফেস্টুন এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানার ও ফেস্টুনও ছিল।

আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, 'অনেকে হয়তো না জেনেই এগুলো লাগিয়েছে। আমরা নোটিশ করেছি। সরিয়ে নিয়েছি। এরপর যদি আবার কেউ এগুলো লাগায়, অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডাকসু নির্বাচনে আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রচারকাজ চালানোর নির্ধারিত দিনগুলোতে সামাজিক, আর্থিক ও সেবামূলক সহযোগিতা বা কর্মকা- পরিচালনা করা যাবে না। এ ছাড়া প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে বা হলে মাজলিশ-মাহফিল আয়োজন করা কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচার চালানোর যাবে না। এগুলো নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে এবং এক্ষেত্রে ‘নির্বাচন আচরণ বিধিমালা’ ধারা-১৭ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে।

এদিকে, ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার এবং একই সংগঠনের আরেক নেতা বায়েজিদ বোস্তামীর প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

সাদিক কায়েমের অভিযোগ :

আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ও জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ এ অভিযোগ করেন।

জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, আমরা আচরণবিধি মেনে ফেস্টুন লাগিয়েছিলাম। কিন্তু রাত একটার সময় নির্বাচন কমিশনের কাছে হঠাৎ নির্দেশ আসেÑসব ব্যানার সরিয়ে নিতে হবে। অথচ হলে হলে কমল মেডি এইডের নামে খিচুড়ি পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। পরে আবার নোটিশ দিয়ে বলা হলো খাবার দিয়ে প্রচারণা করা যাবে না। এমনকি ওই সংগঠন শুক্রবার জুমার নামাজের পর সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানালেও কমিশন বলছেÑএতে কোনো সমস্যা নেই। অর্থাৎ ওরা কিছু করলে সমস্যা নেই, আমরা করলেই ওপর থেকে নির্দেশ আসে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তাদের ব্যানারে থাকা নারী প্রার্থীদের ছবি বিকৃত করা হয়েছে, যা ‘হিজাবোফোবিয়ার বহিঃপ্রকাশ’। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি বলেও দাবি করেন ফরহাদ।

এসময় প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, একটি সুষ্ঠু ও আস্থার নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অপরিহার্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ছাত্র সংগঠনকে ফেভার দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে গোলাপ ফুল বিতরণের পর রাতারাতি গায়েবি নোটিশ জারি হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, শিগগিরই নোটিশ আসবে যাতে ফুলও বিতরণ করা না যায়। তিনি আরো বলেন, ফেস্টুন লাগানোর অনুমতি পেয়েও আমাদের রাতের বেলা নোটিশ দিয়ে সেগুলো সরাতে বাধ্য করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নেওয়া হচ্ছে এবং সবই একটি সংগঠনের পক্ষে যাচ্ছে।

চারুকলায় তাদের ব্যানার বিকৃতির প্রসঙ্গ টেনে সাদিক কায়েম অভিযোগ করেন, নারী প্রার্থীদের ছবিকে বিকৃত করে হেনস্থা করা হয়েছে, কিন্তু প্রশাসন এখনও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ সময় নির্বাচনী ইশতেহারের কিছু দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। নির্বাচিত হলে আমরা অনলাইনে ফি জমা দেওয়া, সাবেক শিক্ষার্থীদের ডকুমেন্টস সংগ্রহসহ সব প্রশাসনিক সেবা ডিজিটালাইজ করব।

কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি আবিদের :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ নির্বিঘœ করতে কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। বুধবার বিকেলে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ দাবি জানিয়েছে তারা। এ সময় এই প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম, এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী তানভীর আল হাদীসহ প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপ বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলটি। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের সামনে ব্রিফিং করে প্যানেলের প্রার্থীরা তাদের দাবি তুলে ধরেন। ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের জন্য মাত্র ৮টি কেন্দ্র রাখা হয়েছে। ভোট দিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর গড়ে ৮ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগবে। সেই হিসাবে একটি কেন্দ্রে সারা দিনে সর্বোচ্চ দেড় হাজার ভোট পড়তে পারে। অথচ প্রতিটি কেন্দ্রে চার থেকে পাঁচ হাজারের বেশি ভোটার রয়েছেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বিঘেœ ভোট দেওয়া নিয়ে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে এই প্যানেলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়ার পরিবর্তে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নষ্টের অভিযোগ দিতেই দিনের বড় সময় কেটে যাচ্ছে। তারপরও কোনো প্রতিকার আমরা দেখছি না।

ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের যা বললেন .......

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের। ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের এ প্রার্থী বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সব দেখেও নির্বিকার ভূমিকায় রয়েছে। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ তোলেন। আব্দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি ঘোষণা করেছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে কেউ তা মানছে না। কমিশন সব দেখছে, তারপরও একটি দলকে (প্যানেল) বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে সব প্যানেল প্রতিযোগিতার মতো আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ক্যাম্পাসে একটি গোষ্ঠী ৯০-এর ডাকসু নির্বাচনের পর গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি চালু করেছিল। এবার ২০২৫ সালের ডাকসুর পর আবারও সেই দিনগুলো ফিরে আসবে কি না, শিক্ষার্থীরা তা নিয়ে শঙ্কিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে ডাকসু নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দরকার নেই। সেনা মোতায়েন হবে মশা মারতে কামান ব্যবহার করার মতো’Ñমন্তব্য করেন আব্দুল কাদের।

ডাকসু ভিপি প্রার্থী জালাল কারাগারে :

হলের রুমমেটকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি প্রার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় জালালের জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী জায়েদুর রহমান। পরে শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নাকচ করেন বিচারক। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন নয়ন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম বিভাগের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জালাল হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে রুমমেট মো. রবিউল হককে মারধর ও ভাঙা টিউব লাইট দিয়ে আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করেন।

এ ঘটনায় জালালকে পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মুহসীন হল প্রাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় জালালকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে হাজির করা হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই মো. আসাদুল ইসলাম তদন্তের স্বার্থে তাকে কারাগারে আটকে রাখার আবেদন করে। এদিন শুনানিতে জালালের আইনজীবী জায়েদুর রহমান বলেন, তার রুমমেট অবৈধভাবে হলে থাকেন। এ বিষয় নিয়ে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। তার রুমমেট তাকে মারধর করে উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। রিমান্ড আবেদন নাই। আর ভিকটিমের মেডিকেল সার্টিফিকেট নাই। জামিনের প্রার্থনা করছি।

এসময় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি কাইয়ুম হোসেন নয়ন জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে বিচারক জালালের বক্তব্য শুনতে চাইলে জালাল উল্টো রুমমেটের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে আদালতের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমার রুমমেটের হল ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি যাননি। তাকে হলত্যাগ করতে হাই কোর্টে রিটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিষয়টা সে জেনে যায়। আমাকে হত্যার উদ্দেশে আঘাত করে।