জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি কারণ দর্শানোর নোটিশ উপেক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বেআইনিভাবে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ভবনের সামনে প্রায় ৪০টি গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে 'জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন'। সোমবার (৩০ জুন) বিকেল ৫টায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন করে তারা। এসময় আন্দোলনকারীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে পরিবেশবিধ্বংসী ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সজিব আহমেদ জেনিচ বলেন, “গভীর রাত কিংবা ছুটির দিনে গাছ কেটে শপিংলিস্ট উন্নয়নের মাধ্যমে এই প্রশাসনও পূর্বতন আওয়ামী প্রশাসনের পথেই হাঁটছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তারা পরিবেশ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে।”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান নিকি বলেন, উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক ঘটনাটি জানেন না বলে দায় এড়াতে চাই। দিনের আলোতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি ‘না জানা’ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এতে আমরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
তারা জানান, গাছ কাটার ঘটনাটি শুধু প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশকেও সরাসরি অবজ্ঞা করার শামিল। এরপরও যদি প্রশাসন দায়িত্ব এড়ায়, তবে তা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়—সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশ উপেক্ষা করে কেন গাছ কাটা হলো তার জবাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে; দুই দিনের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের দরপত্র আহ্বান করতে হবে; পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো ভবনের কাজ শুরু করা যাবে না; এবং অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ—প্রকৃতির যে ক্ষতিসাধন হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর আগে বিকেল সাড়ে তিনটায় বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন। মিছিলটি রেজিস্ট্রার ভবন, শহীদ মিনার হয়ে সিএসই ভবনের উল্টোপাশে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে ‘একই বৃন্তে দু’টি ফুল, ফারজানা আর কামরুল’, ‘মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডার দিতে হবে, দিয়ে দাও’, ‘উপাচার্য কী করে ভোরবেলায় গাছ কাটে’, ‘আমার ক্যাম্পাসে দালালেরা থাকবে না’, ‘আমরা থাকব, আওয়ামী দোসররা থাকবে না’— স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আন্দোলনে যুক্ত ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী স্রোত বলেন, “আমরা বছরের পর বছর মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করছি। তার জন্য আওয়ামী আমলে আমরা হলে উঠতে পারিনি, মার খেয়েছি। এখনো প্রশাসন আমাদের কথা শুনছে না। সরকারের পক্ষ থেকে দুবার কারণ দর্শানোর নোটিশ এলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাহীনভাবে চলতে পারে না।”