ইবরাহীম খলিল ও শহিদুল্লাহ মনসুর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাভার থেকে : কড়া নিরাপত্তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ জাকসু’র ভোট গণনা চলছে। গত রাত ১টায় শেষ খবর পর্যন্ত সম্পূর্ণ এনালগ পদ্ধতিতে ভোট গণনা চলছিল। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণনা শেষে চুড়ান্ত ফল ঘোষণা করতে আজ বিকাল পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এদিকে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বড় কোন অভিযোগ ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয় ভোট গ্রহণ। তবে জাকসুর ভোট গ্রহণের ২১ কেন্দ্রের মধ্যে ২০টিতে যথাসময়ে ভোটগ্রহণ শেষ হলেও ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে ভোট গ্রহণ চলে কাজী নজরুল ইসলাম হলে। কেন্দ্রটিতে সন্ধ্যা ৭ টার পরও লম্বা লাইন দেখা যায়। বৃষ্টির কারণে ভোটগ্রহণে মন্থরগতি দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন অনেকে।

জাকসুতে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৯১৯ জন। মোট ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭৮ জন প্রার্থী। নির্বাচনে অংশ নেয় মোট আটটি প্যানেল, এর মধ্যে ছিল ইসলামী ছাত্রশিবির, বাম সংগঠন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ প্যানেল। এবার জাকসু নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৮.২৫ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে নজরুল হলে। আর কম পড়েছে ফয়জুন্নেসায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়টি একেবারে প্রকৃতির কোলে হওয়ায় এক হল থেকে আরেক হলে যেতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে। কোনটা পুকুরপাড়ে আবার কোনটা জঙ্গলের প্রান্তে। এরমধ্যেও হলের ভেতর ভোট কেন্দ্র হওয়ায় অন্যরকম এক আবহ তৈরি হয় ভোটারদের মধ্যে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর ভোট হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না। কোনরকম চাপ না থাকায় অনেকটা নিজের মতো করেই ভোট দিতে আসেন জাকসুর ভোটাররা। তাজ উদ্দিন হলের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন এরকম স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবো কল্পনা করতে পারিনি। নিজের পছন্দমত ভোটারকে ভোট দিতে পেরে ভাল লাগছে। এরকম উৎসবমূখরতা ছিল অন্য হলগুলোতেও।

জাকসু নির্বাচনে ভোট পড়লো ৬৮.২৫ শতাংশ সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে নজরুল হলে কম ফয়জুন্নেসায়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলো ১১,৭৫৯ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮,০২৬ জন শিক্ষার্থী। ফলে এবারের নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার দাঁড়ায় ৬৮.২৫ শতাংশ।

আলবেরুনী হলে ২১০ ভোটারের মধ্যে ১২৫ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণের হার ৫৯.৫২ শতাংশ। আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ৩৩৩ জনের মধ্যে ২১৬ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৬৪.৮৬ শতাংশ। মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ ভোটারের মধ্যে ৩১০ জন ভোট দিয়েছেন, হার দাঁড়িয়েছে ৬৬.৮১ শতাংশ। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ভোটার সংখ্যা ২৮০ হলেও ভোট পড়েছে মাত্র ১৩৮, অংশগ্রহণের হার মাত্র ৪৯.২৯ শতাংশÑযা এবারকার নির্বাচনে সর্বনিম্ন।

শহীদ সালাম-বরকত হলে ২৯৯ জনের মধ্যে ২২৪ জন ভোট দিয়েছেন (৭৪.৯২%)। মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ জনের মধ্যে ৩৮৪ জন ভোট দিয়েছেন (৭৪.৭১%)। জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জনের মধ্যে ২৪৭ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৬৭.৩০ শতাংশ। প্রীতিলতা হলে ৩৯৯ জন ভোটারের মধ্যে ২৫০ জন ভোট দিয়েছেন (৬২.৬৬%)। বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৯ জনের মধ্যে ২৪৯ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণের হার ৬০.৮৮ শতাংশ।

১০ নং (ছাত্র) হলে ৫২২ ভোটারের মধ্যে ৩৮১ জন ভোট দিয়েছেন (৭২.৯৯%)। শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫১ জন ভোটারের মধ্যে ৪৭০ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৭২.২০ শতাংশ। বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ জনের মধ্যে ২৪৬ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণের হার মাত্র ৫৩.৯৫ শতাংশ। ১৩ নং (ছাত্রী) হলে ৫১৯ ভোটারের মধ্যে ২৯২ জন ভোট দিয়েছেন (৫৬.২৬%)। ১৫ নং (ছাত্রী) হলে ৫৭১ জনের মধ্যে ৩৫০ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণের হার ৬১.৩০ শতাংশ।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ জন ভোটারের মধ্যে ২৬১ জন ভোট দিয়েছেন (৭৪.৫৭%)। রোকেয়া হলে ৯৫৫ জনের মধ্যে ৬৮০ জন ভোট দিয়েছেন (৭১.২০%)। ফজিলাতুন্নেসা হলে ৮০৩ জনের মধ্যে ৪৮৯ জন ভোট দিয়েছেন (৬০.৯০%)। বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৪ জনের মধ্যে ৫৯৫ জন ভোট দিয়েছেন (৬০.৪৭%)। ২১ নং (ছাত্র) হলে ৭৩৫ জনের মধ্যে ৫৬০ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৭৬.১৯ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলেÑমোট ৯৯১ জন ভোটারের মধ্যে ৮০৭ জন ভোট দিয়ে অংশ নিয়েছেন, যা ৮১.৪৩ শতাংশ। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন ভোটারের মধ্যে ৭৫২ জন ভোট দিয়েছেন, অংশগ্রহণের হার দাঁড়িয়েছে ৭৯.৪১ শতাংশ। ফলে এবারের নির্বাচনে সর্বাধিক অংশগ্রহণ হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল ও ২১ নং (ছাত্র) হলে। অপরদিকে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে।

এদিন সকাল ১১টা থেকে সাভারে বৃষ্টি শুরু হয়ে চলে দুপুর পর্যন্ত। সেই বৃষ্টির প্রভাব পড়ে জাকসু নির্বাচনে। বৃষ্টির কারণে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে। বৃষ্টি থামলে সম্পূর্ণ আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুরের পর ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তবে সারাদিন ছিল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি নানা অভিযোগের ফিরিস্তি। তারা মিডিয়ার সামনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।

অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ

ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে শুরু করে জাকসু নির্বাচন কর্তৃপক্ষ নানাভাবে বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই ভোটগ্রহণ চলে। সকাল থেকেই লাইনধরে ভোট প্রয়োগ করেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

ভোট গ্রহণের আগের রাত অর্থাৎ ভোট বুধবার রাতেই ছাত্রদলের সাবেক নেতা নির্বাচন কমিশনের অফিসে প্রবেশ করে। এ খবর অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যায়। প্রার্থীরা অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার জন্য কমিশনের অফিসে এসেছিলেন। নানা অপতৎপরতা চালানোর অভিযোগ আনেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, নির্বাচনী আচরণমালা লঙ্ঘন করা হলেও কেউ কিছু বলছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটের দিন পোলিং এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে তারা ধূম্রজাল তৈরি করেছে। প্রার্থীদের জোর দাবির কারণে তার পোলিং এজেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তাদের পরিচিতি নিয়ে তামাশা করা হয়। অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে রয়েছে অবহেলার অভিযোগ। অংশীজন এবং প্রার্থীরা বলছেন, অনেক ভোট কেন্দ্রে অমোচনীয় কালি আঙ্গুলে দেননি অনেকে। ভোটারদের আইডি কার্ডে কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ছিল না। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ছবি যাচাইয়ে বাধ্য হয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্টরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে পরিদর্শনে এসে বহিরাগত হিসেবে আটক হয়েছেন ছাত্রদলের ৩৬ ব্যাচের এক নেতা। ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে মব তৈরি করে সাংবাদিককে শিবির ট্যাগে হট্টগোল হয়েছে।

তাজ উদ্দিন হলে হট্টগোল

বৃষ্টির মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে তাজ উদ্দিন হলের কেন্দ্রে। যখন প্রার্থীরা জানতে পারেন যে সেখানে যারা ভোট দিয়েছেন তাদেও আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি দেওয়া হচ্ছে না; তখন শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের প্রার্থীরা এসে হৈ চৈ শুরু করেন। তখন বাধ্য হয়ে ভোট গ্রহণ থামানো হয়। এই অবস্থা কিছুক্ষণ চলে। প্রার্থীরা হল ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা প্রভোস্ট প্রফেসর লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চান, যাদের হাতে অমোচনীয় কালি দেওয়া হয়নি তারা আবার ভোট দিতে এলে তাদের কিভাবে চিহ্নিত করবেন। এটাতো প্রহসনের নির্বাচন করা হচ্ছে। এজন্য বাজেট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খরচ করা হয়নি। এর জবাব দিতে পারেনি ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। ততক্ষণে ১৫৩জন ভোট দিয়ে ফেলেছেন। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন যে ভোটার আইডি কার্ডে অনেকের ছবি নেই, সিগনেচার নেই। ফলে কেউ দুইবার ভোট দিতে এলে তা চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ষড়যস্ত্রের অংশ হিসেবে প্রহসনের নির্বাচন করার জন্য ইচ্ছে করেই তা করা হচ্ছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. মো. আলমগীর কবির দৈনিক সংগ্রামকে জানান, ছবি ছাড়াই ভোট গ্রহণ করার কারণে শিক্ষার্থীরা হৈ চৈ করেছে। তাদের দাবির কারণে এখন ছবিসহ ভেরিফাই করা শুরু করেছি। এগুলো আমাদের জন্য ঐচ্ছিক ছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ব্যাপক অসংগতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট। প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘আমরা গতকাল বুধবার থেকে দেখতে পেয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।’বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনে প্রক্টর অফিসের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আরিফ উল্লাহ। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অন্যান্য প্যানেলের কিছু বিষয়েও অভিযোগ তোলেন তিনি। একই প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে জানান, নির্বাচনের আগের রাত অর্থাৎ বুধবার রাতেই আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম, আমরা যেহেতু দেখেছি প্রাক্তন শিক্ষার্থী নির্বাচন কমিশনের অফিসে ঢুকে গেছে। এটা আমাদের শঙ্কার জায়গা যে নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করছে কি-না। সেই জায়গা থেকে আমরা কতগুলো উদ্বেগের কথা জানিয়ে এসেছি যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। পোলিং এজেন্টের ব্যাপারটা গতকাল রাতেই সেই জায়গাতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটের দিন পোলিং এজেন্ট এবং স্বচ্ছ ভোটকেন্দ্রিক বিষয়গুলো তারা সার্ভ করেননি। আমরা দেখেছি ছাত্রদলের ৩৬ ব্যাচের এক নেতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে পরিদর্শনে এসে বহিরাগত হিসেবে আটক হয়েছেন। একইসাথে ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে মব তৈরি করে সাংবাদিককে শিবির ট্যাগ দিয়ে ভেতরে হট্টগোল করেছে। অভিযোগ করেছে ভেতরে নাকি কারচুপি করা হচ্ছে। অথচ তারা নিজেরা লিফলেট বিতরণ করেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার অপপ্রয়াস মনে হয়েছে।

বেলা দুইটার দিকে সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা ভোট দিলে জুলুমবাজদের পতন করা যাবে। কমিশনকে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং বলেন, আমরা ভোট কারচুপি করার প্রমাণ তারা দেখাতে পারবেন না। বরং ছাত্রদলের লোকজনই নারীদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে হট্টগোল করেছে। আমরা প্রমাণ দেখাতে পারবো।

বেলা সোয়া ১টার দিকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা হলে গিয়ে দেখা যায় এক ঘন্টা ধরে ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। বাগচাসের এক প্রার্থী ও ছাত্রদল সমর্থিত ভিপিপ্রার্থী দলবল সাথে নিয়ে ছাত্রীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে। নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে সেখানে হট্টগোল তৈরি হয় এবং এক ঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। দেড়টার দিকে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

বেলা পৌনে দুইটার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মুনিরুজ্জামান দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, তার কাছে তখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি। তবে তিনি এও জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা দেওয়া আছে। তারা সমস্যা নিরসনের জন্য প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন।

ভোট বর্জন কয়েকটি সংগঠনের

জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয় ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে। পরে সম্প্রীতির ঐক্য, সংশপ্তক পর্ষদ ও স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদও ভোট বয়কটের ঘোষণা দেয়। ৫ স্বতন্ত্র প্রার্থীও এক পর্যায়ে ভোট বর্জন করে। নির্বাচন কমিশন গঠন করে তফসিল ঘোষণাসহ পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে তারা।

গতকাল ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা মওলানা ভাসানি হলে বসে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, জামাত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার ছাপানো এবং ওএমআর মেশিন কেনা হয়েছে। একারণে তারা এই ভোট বর্জন করেছেন। তারা এই নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে আখ্যা দেন। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী শেখ সাদী হাসান এ সময় অভিযোগ করেন, ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর কোনও এক অখ্যাত কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করে। ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ভোট গণনায় কারচুপির বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু একই কোম্পানির ব্যালটপেপার দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এসময় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী অভিযোগ করে বলেন, ‘তাজউদ্দীন হলে আমাদের ঢুকতে দেয়নি। তালিকায় ভোটারদের ছবি নেই, ২১নং হলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে। জাহানারা ইমাম হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে। কারচুপির অভিযোগ করে বৈশাখী বলেন, ‘মেয়েদের হলে একই ভোটার বারবার ভোট দিতে গেছেন। শিবিরপন্থি সাংবাদিকরা ছাত্রদলের প্রার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।

(জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে হয়নি বলে অভিযোগ করে বামপন্থী শিক্ষার্থীদের সমর্থিত প্যানেল সম্প্রীতির ঐক্যের প্রার্থীরাও। সম্প্রীতির ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শরণ এহসান বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) রাত দুইটার পর জানানো হয়েছিল, প্রার্থীরা কেন্দ্রগুলোতে পোলিং এজেন্ট রাখতে পারবে। কিন্তু আজকে সকালে যখন পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে গেছে, তখন তাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়মের শুরু হয়েছে ভিপিপ্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের মধ্য দিয়ে। আজকে কয়েকটি হলে আমাদের প্যানেলের পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। প্রশাসন বলেছে তাদের ওপর আস্থা রাখতে। কিন্তু এই সময়কালে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান ছিল। প্রশাসনের এহেন আচরণ ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

শিবিরের প্রতিক্রিয়া

ছাত্রদলের ভোট বর্জনের প্রতিক্রিয়া শিবির প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, হেরে যাবে নিশ্চিত হয়েই ছাত্রদল নির্বাচন বর্জন করছে। ‘একটি নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন নাকি করবেন না, এ ব্যাপারে তাদের স্বাধীনতা রয়েছে, তারা সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটের দ্বারা রায় দেবেন এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিনা।তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ভোটিং মেশিন নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই মেশিন নাকি জামায়াতের প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু এই তথ্য সত্য নয়। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং বিএনপির সম্পর্ক রয়েছে। মাজহারুল ইসলাম বলেন, ভোট বর্জন করলেও শিবির তাদের পাশে রয়েছে। তারা মূলত সহমর্মিতা সহযোগিতা এবং একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার করেন।

বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের ভোট বর্জন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন তিন শিক্ষক। তারা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্য। এদিন বিকেল ৪টার আগেই তারা বিভিন্ন কেন্দ্র ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তারা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান বলেন, ‘প্রশাসন শুরু থেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করছে। নানা অনিয়ম, কারসাজি করছে। এরকম একটা নির্বাচনের দায়ভার আমাদের নেওয়া উচিত না। প্রতিবাদের জায়গা থেকে আমরা দায়িত্বশীল শিক্ষকরা এই নির্বাচনকে বর্জন করলাম।