ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার ছাপানোকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন রহস্য। নিউজ ২৪-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নীলক্ষেতের জালাল প্রেসে ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপানো হয়েছে এবং মক্কা কাটিং হাউসে কাটিং হয়েছে ৮৮ হাজার ব্যালট। ফলে কোথায় গেল ৮ হাজার ব্যালট—এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরাও।

তবে জালাল প্রেসের মালিক জালাল দাবি করেছেন, তিনি মোটেও ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপাননি। তার ভাষ্য, “আমি ৮৬ হাজারের মতো ব্যালট ছেপেছি। কিছু কমবেশি হতে পারে, তবে ৮৮ হাজারের বেশি নয়। আমাকে যত কাগজ দেওয়া হয়েছিল, সেটির চেয়ে বেশি ব্যালট ছাপানো সম্ভব নয়। এর মধ্যে আবার কিছু ওয়েস্টেজও থাকে।”

জালাল আরও জানান, তারা আসলে রিম হিসেবে কাগজের হিসাব করেন, আলাদা করে ব্যালট গোনেন না। তিনি বলেন, “যদি কোন কাগজ নষ্ট না হয়, তবে প্রতিরিমে প্রায় ৪ হাজার ব্যালট হয়।”

প্রতিবেদকের প্রশ্নে ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপানোর কথা স্বীকার করেছিলেন কেন—এমন প্রশ্নে জালাল বলেন, “ভিডিওতে দেখবেন, ওই রিপোর্টার একটি হিসাব বলে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ৯৬ হাজার ব্যালট? তখন আমি বলেছি হ্যাঁ, ওরকমই হবে। কিন্তু সেটা আমি নিজে হিসেব করে বলিনি। কাজের চাপ আর সাংবাদিকের জেরার মধ্যে আমি খেয়াল হারিয়ে ফেলেছিলাম।”

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যালট ছাপানোর কাগজ প্রথমে আসে মক্কা কাটিং হাউসে, জালাল প্রেসে নয়। বাদশা নামের এক কাগজ ব্যবসায়ী থেকে ফেরদৌস ওয়াহিদ নামের এক সাপ্লায়ার ২২ রিম কাগজ সরবরাহ করেছিলেন মক্কা কাটিং হাউসে। প্রতিরিমে থাকে ৫০০ কাগজ। ওই কাগজকে চার ভাগে ভাগ করে পাঠানো হয় জালাল প্রেসে, যেখানে ব্যালট ছাপানো হয়। পরে সেসব ব্যালট ফেরত আসে মক্কা কাটিং হাউসে, যেখানে প্রতিটি কাগজ দুই ভাগে কেটে আলাদা ব্যালট তৈরি করা হয়। এরপর ব্যালটগুলো সাপ্লায়ার ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মক্কা কাটিং হাউসের মালিক আলিফ জানান, বাদশার দোকান থেকে পাওয়া ২২ রিম কাগজ দিয়ে ৮৮ হাজার ব্যালট হয়। তবে ছাপানো বা কাটিংয়ের সময় বিভিন্ন কারণে কিছু ব্যালট নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। এজন্য অর্ডারের সময় অতিরিক্ত কাগজ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “মেশিনে ডিস্টার্ব, কালির সমস্যা, কাটিংয়ের সময় ছিঁড়ে যাওয়া বা কালি লেগে যাওয়া—এসব কারণে ব্যালট নষ্ট হতে পারে। তাই ঠিক কত ব্যালট টিকে থাকে, সেটা আমরা বলতে পারি না। সেটা বলতে পারবেন সাপ্লায়ার, যিনি গুনে বুঝিয়ে দেন।”

আলিফ আরও বলেন, “মিডিয়াতে জালাল প্রেসের মালিকের ৯৬ হাজার ব্যালট বলার বিষয়টা আসলে হঠাৎ প্রশ্নে বলে ফেলা। সে জানে না, জানার কথাও না। কারণ এতগুলো ব্যালট গোনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা শুধু রিম বা কাগজের হিসেবে কাজ করি।”