নূর আলম নেহাল, রাবি থেকে : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশের প্রধান ৪টি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের পালা শেষ হলো। বাকি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সংসদ নির্বাচনে প্যানেল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভিপি, জিএস, এজিএস পদ পেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সংসদের নির্বাচনে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে।
রাবি’র হল সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। ১৭টি হলে ভিপি, জিএস, এজিএস পদে ঐ প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। আর ৪টি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলসহ সব মিলিয়ে ২৫৫টি পদের মধ্যে ২৩৩টিতে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা। অপরদিকে কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্রদল ১টি পদ পেলেও হল সংসদে বড় ভরাডুবি হয়েছে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের। ১৭ হলের একটি পদেও তাদের সমর্থিত কোনো প্রার্থী জিততে পারেননি। হল সংসদে বাকি ২১টি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদে পদ ছিল ১৫টি। ১৭টি আবাসিক হলের ভিতর ছাত্রদের জন্য ১১টি ও ছাত্রীদের ৬টি হল রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি সংসদের শীর্ষ ৫১ পদেই ভিপি-জিএস-এজিএস ঐ প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি আবাসিক হল শহীদ হবিবুর রহমান হল, নবাব আব্দুল লতিফ হল, মাদার বখ্শ হল এবং সৈয়দ আমীর আলী হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের পূর্ণাাঙ্গ ৬০টি পদে জয়ী হয়েছেন। বিজয়-২৪ হলে সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদ ছাড়া বাকি সব পদেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ১৫টি পদের মধ্যে শিবির-সমর্থিত প্যানেল বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, সহবিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্য ৪টি পদ ছাড়া বাকি ১১টি পদে জয় পেয়েছে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল সংসদের ১৫ পদের মধ্যে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া বাকি সব পদে শিবির জয় পেয়েছে। শহীদ শামসুজ্জোহা হল সংসদের ১৫ পদের মধ্যে নির্বাহী সদস্যের একটি পদ ছাড়া বাকি সব পদে জয়ী হয়েছেন। শাহ মখদুম হল সংসদে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া বাকি ১৪টি পদে জয়লাভ করেছে। তাপসী রাবেয়া হলে ১৪ পদের মধ্যে ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক প্রার্থী ছাড়া সবাই জয় পেয়েছেন। জুলাই-৩৬ হলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া ১৩ জনের প্যানেলের ১১ জনই জয়ী হয়েছেন। বেগম রোকেয়া হলে ১৪ জনের প্যানেলের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলোতে শিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। রহমতুন্নেসা হল সংসদে ১৪ পদের ১৪ জনই বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে কোনো প্রার্থী না থাকায় ৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া হলেও ১৪ জনের প্যানেলের সবাই জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে এই প্যানেলের ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন।
প্রস্তুত রাকসু ভবন
রাকসু নির্বাচনে নর্বনির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য রাকসু ভবনের কক্ষগুলো ঘুষে মেঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং প্রস্তুত করা হচ্ছে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ সকল প্রার্থীর বসার কক্ষ। তবে একাজ আজ রোববারের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জানা যায়, গত ৩৫ বছর রাকসু না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন রাকসু ভবনের বিভিন্ন কক্ষ থেকেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। রাকসু নির্বাচন না হওয়ার কারণে এই ভবনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি’র অফিসও ছিল। তারা যে কক্ষটি ব্যবহার করছিল, সেটিই রাকসুর সহ-সভাপতির (ভিপি) কক্ষ। রাকসু ভবন সংস্কারের দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন। তিনি বলেন, রাকসু ভবনে থাকা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্কুলের টিনশেড ভবনে জায়গা দেয়া হয়েছে। তারপর থেকেই ভবনটিতে রং করা ও সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। রোববার থেকে নবনির্বাচিতরা তাদের কক্ষগুলোতে বসতে পারবেন।
ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতা অভিযান
নির্বাচনে জয় লাভের পর গতকাল শনিবার রাবি ক্যাম্পাসে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায় ইসলামী ছাত্রশিবির। তারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে পুরো ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন। আজ রোববার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পাবে বলে শিবিরের একজন দায়িত্বশীল জানান।