পাবলিক পরীক্ষার ফল জালিয়াতি যেন পিছু ছাড়ছেই না চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের। সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষায় নিজের ছেলের ফল পরিবর্তনের মামলায় সাবেক সচিব কারাগারে গেছেন। এর মধ্যেই নতুন করে এসএসসি পরীক্ষায় ১৯ পরীক্ষার্থীর ৩৪টি উত্তরপত্রে নম্বর জালিয়াতির অভিযোগে অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার দুপুরে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের একটি দল এ অভিযান চালায়। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা দুদকের সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে তারা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মূল খাতা ও টপশিটে নম্বর সঠিক থাকলেও কম্পিউটার ইনপুটে নম্বর বাড়ানো হয়েছে। এ কাজ মূলত প্রোগ্রামার ও সহকারী প্রোগ্রামারের কক্ষে করা হয়েছে বলে ধারণা করছি।’ তিনি আরও জানান, অভিযানের সময় সংশ্লিষ্ট উত্তরপত্রগুলো পর্যালোচনা, অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলা এবং বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি প্রথমে কুমিল্লা বোর্ড থেকে আসা এক সহকারী অ্যানালিস্ট শনাক্ত করেন। পরে তিনি বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবহিত করলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত প্রতিবেদন দেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা এখনো কাজ করছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘পুনঃনিরীক্ষণের সময় এ অনিয়ম ধরা পড়ে। বিষয়টি জানার পর গত ২ সেপ্টেম্বর আমি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আজ দুদক কর্মকর্তারা এ নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আমি তাদের সব তথ্য জানিয়েছি।’ উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন, যার মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন এবং ফেল করেছে ৩৯ হাজার ২০৭ জন। ফলাফল প্রকাশের পর ৭৮ হাজার ১৯২টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা হয়, যার মধ্যে ১ হাজার ৬৬৯টি ক্ষেত্রে ফল পরিবর্তন হয়।

এর আগে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলের ফল জালিয়াতির অভিযোগে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ কারাগারে যান। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফল প্রকাশের আগে যোগসাজশে নক্ষত্র দেবনাথের ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছিল। তদন্তে এ ঘটনার প্রমাণ মিললে তার ফল বাতিল করা হয় এবং নারায়ণকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। পরে দুদক এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ধারাবাহিকভাবে ফল জালিয়াতির এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।