২৫ তারিখেই রাকসু নির্বাচন
রাজশাহী ব্যুরো ও রাবি রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্যকোটার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রোভিসি-রেজিস্ট্রার-প্রক্টরসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে ৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। গতকাল রোববার রাবি’র সিন্ডিকেট সভায় এই কোটা স্থগিত রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এদিকে আগামী ২৫ তারিখেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা। জুবেরি ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে গতকাল পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক-কর্মচারিরা।
শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির মুখে গত বৃহস্পতিবার রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল করা হয়। এর প্রতিবাদে গত শনিবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা নিজ বাসভবন থেকে প্রশাসন ভবনের দিকে যাওয়ার সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের গাড়ি আটকায়। এসময় তিনি জুবেরী ভবনে (শিক্ষক ক্লাব) যেতে থাকলে শিক্ষার্থীরা সেখানেও তার পিছু নেয়। খবর পেয়ে রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরসহ বেশ কিছু শিক্ষক তাঁকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন। জুবেরী ভবনের সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় উপ-উপাচার্য ও একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে লাঞ্ছিত করা হয়। শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ দোতলার কক্ষে আশ্রয় নিলে সেখানে ৭ ঘণ্টা ধরে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা জুবেরী ভবন ছেড়ে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিলে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা বের হয়ে আসেন।
কর্মবিরতির ঘোষণা: শনিবার রাত ৯টার দিকে উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরকে ‘শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত’ করার অভিযোগ এনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা অংশ কর্মবিরতির ডাক দেয়। সিনেট ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল আলিম বলেন, শিক্ষকদের অপদস্তের বিচার না হলে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করা হবে। এই ঘোষণার সাথে সাথে ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। ১৭টি হল থেকে একযোগে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আন্দোলন শুরু করেন। এসময় আবাসিক হলের ছাত্রীরাও মিছিল নিয়ে বের হন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিটি হল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে প্যারিস রোডে সমবেত হন এবং বিভিন্ন প্রকার স্লোগান দিতে থাকেন। রাত ১টায় উপাচার্য প্রফেসর সালেহ হাসান নকীব সমবেত শিক্ষার্থীদের সামনে পোষ্য কোটায় ভর্তি কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাবিতে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হলো।’ এসময় প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানকে বলতে শোনা যায়, “ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আমার হাতের ঘড়ি ও সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, কিন্তু আমার হাতের ঘড়ি ও ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।”
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত: উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৫টার পর সভা শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইফতিখারুল আলম মাসউদ। তিনি জানান, সিন্ডিকেট সভায় প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। পাশাপাশি শনিবার জুবেরী ভবনে শিক্ষক লাঞ্ছনার যে ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি স্থগিতের যে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই বিষয়টি সিন্ডিকেটকে জানানো হয়েছে। সিন্ডিকেট এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় আজ (রোববার) থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেটা আমরা শুরু করছি না। আমাদের সংশ্লিষ্ট বডিগুলোতে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।” জুবেরী ভবনে শিক্ষক লাঞ্ছনাকে নজিরবিহীন ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গতকাল একজন উপ-উপাচার্য এভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ জন্য সিন্ডিকেট নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
পূর্ণদিবস কর্মবিরতির পালন: পোষ্য কোটা আবারো স্থগিত হওয়ায় পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গতকাল রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি ফলকের সামনের নিচুতলায় তারা অবস্থান নেন। এতে বন্ধ থাকে সকল ধরনের অফিসিয়াল কার্যক্রম। কিন্তু কিছু কিছু বিভাগ নিজ উদ্যোগে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছে। তবে এ কর্মসূচিতে কোনো শিক্ষককে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। এবিষয়ে অফিসার্স সমিতির সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, “গতকালকে (শনিবার) ছাত্র নামধারী কিছুসংখ্যক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এমনি তাকে বাসাতেও ঢুকতে দেয়া হয়নি। এদেরকে চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে। এই আন্দোলন রাকসুতে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাকসুতে এই আন্দোলন কোনো প্রভাব ফেলবে না। রাকসুকে আমরা আমাদের কর্মসূচির বাইরে রেখেছি।”
২৫ তারিখেই রাকসু নির্বাচন : আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান ইস্যু সামনে আসছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির ফলে নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে এমন কর্মসূচির ফলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে সঠিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে। এ বিষয়ে রাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. সেতাউর রহমান বলেন, “শনিবার রাতের ঘটনায় আমাদের নির্বাচনি কোনো কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলে আমরা মনে করছি না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা সকল ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। উপাচার্য স্যারও আমাদের সকল ধরণের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ২৫ তারিখেই রাকসু নির্বাচন হবে, আমাদের নির্বাচনি সকল কার্যক্রম চলমান।”