বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ৫৩তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (১১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৪০ জন নবীন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ৫০০০ টাকা করে মোট ২ লক্ষাধিক টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে সংগঠনটি।
আয়োজকেরা জানায়, নবাগত শিক্ষার্থীরা অনেকেই আর্থিক সংকট, সামাজিক প্রতিকূলতা ও শিক্ষার ব্যয়ভার সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানো ও উচ্চশিক্ষা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ জানান, শিক্ষা কেবল বই-পুস্তকে সীমাবদ্ধ নয়; বরং শিক্ষার্থীদের মৌলিক প্রয়োজন ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, “শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার হলেও এটি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা বা সুযোগ এখনো অনেক শিক্ষার্থীর নাগালের বাইরে। রাষ্ট্রের তরফ থেকে যতটা সহায়তা পাওয়া উচিত, তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। এমতাবস্থায় ছাত্রশিবিরের মতো একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন একটি উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মনে আশা জাগায়।”
শাখা শিবিরের সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির শুধু একটি ছাত্রসংগঠন নয়, এটি একটি আদর্শভিত্তিক চলমান আন্দোলন। আমরা শুধু দাবি তুলি না, বরং নিজ অবস্থান থেকে সমস্যার সমাধানে অংশ নিই। আমাদের কর্মপদ্ধতির চতুর্থ দফায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের নানা সমস্যা চিহ্নিত করে আমরা যথাসাধ্য সমাধান করার চেষ্টা করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করা এবং ব্যাক্তিগত ও সমষ্টিগত সহায়তা প্রদান—এই তিনটি ধাপে আমরা কাজ করে থাকি। আপনাদের পাশে আমরা আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বাজেট বরাদ্দ মাত্র ১.৬৯ শতাংশ, যা একটি জাতির জন্য চরম হতাশাজনক। একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার যুবসমাজের উপর। অথচ সেই যুবসমাজের জন্য নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, নেই অবকাঠামোগত সহায়তা। শুধু পরীক্ষায় ভালো করা নয়, একজন শিক্ষার্থীকে যোগ্য, নৈতিক এবং নেতৃত্বদানে সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য দরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ। ছাত্রশিবির আত্মসমালোচনামূলক চর্চার মাধ্যমে নিজস্ব ত্রুটি খুঁজে বের করে, তা সংশোধন করে সামনে এগিয়ে যায়। আমাদের ব্যক্তিগত রিপোর্টেও আত্মসমালোচনার একটি নির্ধারিত অংশ থাকে। এই সংস্কৃতি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়া উচিত। কারণ আত্মসমালোচনাই উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ডের প্রতি আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। আমি নিজেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে দেখেছি, কীভাবে একটি সংগঠন নিয়মশৃঙ্খলা, সততা ও দক্ষতার মাধ্যমে বড় পরিবর্তন সাধন করতে পারে। ১৯৮৫ সালের চাকসু নির্বাচনে শিবির পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নিয়ে জয়ী হয়েছিল, যেখানে তাদের প্যানেলে একজন অমুসলিম প্রার্থীও ছিলেন। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক মানসিকতাই তাদের আলাদা করে চেনায়। আজকের শিক্ষাবৃত্তির আয়োজন তারই একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত। আমি আশা করি, তারা ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আরও বড় পরিসরে কাজ করবে।”
বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “ইসলাম কেবল একটি ধর্ম নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দর্শন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন একজন দূরদর্শী কূটনীতিক ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ। হুদায়বিয়ার সন্ধি, মদিনা সনদের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সাক্ষ্য বহন করে। ইসলামে ইনক্লুসিভিটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সুরা হুজরাতে বলা হয়েছে—সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখতে হবে। একজন প্রকৃত মুসলমান হতে হলে কেবল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, চরিত্র, ব্যবহার ও মূল্যবোধের উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। আমাদের সবারই উচিত কুরআনের পাঠ গ্রহণ করা এবং তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা।”