চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে অনলাইনে ভুয়া তথ্য, বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ও সাইবার বুলিং মোকাবিলায় প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট।
গতকাল সোমবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব। এ সময় প্যানেলের অন্য সদস্য ও বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্ট ও সাইবার হামলা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। প্রার্থীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ভুয়া পোস্ট, বিকৃত তথ্য ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ প্রশাসন এ বিষয়ে এখনও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ আমরা প্রশাসনের কাছে দাখিল করেছি। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”
সাঈদ বিন হাবিব নির্বাচনের দিন অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি “ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম” গঠনের দাবি জানান। তার প্রস্তাব, “এই টিমে প্রশাসনের প্রতিনিধি ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলোর মনোনীত সদস্য থাকতে হবে, যাতে অভিযোগগুলো দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে নিষ্পত্তি হয়।”
এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোটকেন্দ্রে সহায়তা ডেস্ক, স্পষ্ট নির্দেশনা ব্যবস্থা এবং ব্রেইল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ রাখতে হবে। এটি শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, নৈতিক বাধ্যবাধকতাও।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্যানেলের ভিপি (সভাপতি) প্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি বলেন,“নির্বাচনে জয়-পরাজয় স্বাভাবিক বিষয়। আমরা সেটি মাথায় রেখেই নির্বাচনী মাঠে নেমেছি। যারা বিজয়ী হবে, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তাদের সঙ্গে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করব। আমরা যদি বিজয়ী না হই, তবুও ফলাফল মেনে নেব। আর বিজয়ী হলে সবার সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষে সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্রশাসনের প্রতি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানায়। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এজিএস প্রার্থী সাজ্জাদ হোছেন মুন্না, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী মোনায়েম শরীফ, সমাজকল্যাণ ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী তাহসিনা রহমানসহ প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থীরা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাকসু) নির্বাচনের মতো এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ব্যালটও ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন) পদ্ধতিতে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “ভোটাররা ব্যালটে নির্দিষ্ট বৃত্ত ভরাট করে নিজেদের ভোট প্রদান করবেন। এই পদ্ধতিতে ভোট গণনা দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ফলাফল ঘোষণা করা যাবে।”
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাকসু নির্বাচন। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এবারের নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসজুড়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে প্রার্থীদের প্রচারণা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও উঠেছে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ঠিক আগে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। রোববার রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামুনকে সাংগঠনিক পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বহিষ্কৃত মামুনের সঙ্গে যেন কোনো নেতাকর্মী সাংগঠনিক যোগাযোগ না রাখেন।
তবে চবি ছাত্রদলের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, মামুন ছিলেন একজন ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা। জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ও তিনি সম্মুখসারিতে থেকে সংগঠনের হয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক চাকসু নির্বাচনে প্যানেল গঠনের সময় মাঠপর্যায়ের অনেক ত্যাগী কর্মীকে উপেক্ষা করা হলে মামুন কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দেন। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত তিনি বহিষ্কারের মুখে পড়েন।
এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মামুন ভাই ছিলেন চবি ছাত্রদলের সবচেয়ে ত্যাগী নেতা। তিনি ঝুঁকি নিয়ে সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু চাকসুতে জুলাইয়ের সম্মুখসারির অনেকেই সুযোগ পাননি। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আর এজন্যই আজ তাকে বহিষ্কার করা হলো।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে চবি শাখা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন উর রশিদ মামুন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. ইয়াসিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়