জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। ফ্যাসিস্ট পরবর্তী বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আজ ১৯ সেপ্টেম্বর এক বছর পূর্তি। তবুও গেলো এক বছরে জড়িতদের বিচার করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগ ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তদন্ত কমিটি, বিজ্ঞপ্তি আর আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সবকিছু। ‎২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে ও বাইরে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নানাবিধ হুমকিসহ ছিলো হয়রানি মূলক কর্মকান্ড। তবুও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তদন্ত কমিটিতেই সীমাবদ্ধ : বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়,গত বছরের জুলাইয়ের সহিংসতার পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া আহ্বায়ক এবং প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক সদস্য সচিব হন। কমিটিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এক বছর পার হলেও তা দিতে পারেনি। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কমিটির অভিযোগ বারবার গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও শিক্ষার্থী ও ছাত্র নেতাদের পক্ষ থেকে আশানুরূপ অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগের পরিমান খুবই কম।

ছাত্রনেতাদের ক্ষোভ : এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছে প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই অপরাধীরা শাস্তি এড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে পতিত ফ্যাসিস্ট অনুসারী ও অপরাধীদের বিচার হচ্ছে না। এবিষয়ে জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, ‘অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু জবিতে প্রশাসন দায়সারা কাজ করছে। সবাই জানে কারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল, অথচ বিচার হয়নি।’

শাখা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম আরিফ বলেন, জুলাই অপরাধীদের বিচার করতে না পারা প্রশাসনের সবথেকে বড় ব্যর্থতা।এর পেছনে দায়ী তাদের গাফিলতি এবং দীর্ঘসূত্রিতা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মারুফ বলেন, ‘১৫ জুলাইয়ের হামলার ছবি ও ফুটেজসহ তথ্য আমরা জমা দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের অনীহার কারণে বিচার হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে।’

জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘আমরা প্রায় দেড়শো জনের নাম তথ্যপ্রমাণসহ প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু দুর্বলতা আর গাফিলতির কারণে আজও কোনো বিচার হয়নি। হয়তো এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে।’

বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটির কাছে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আমরা প্রত্যাশিত তথ্য পাইনি। মাত্র ১০ শতাংশ তথ্য জমা পড়েছে। তবু এ তথ্য দিয়েই আমরা রিপোর্ট তৈরি করছি। অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে, খুব শিগগিরই বাকি কাজও শেষ হবে।’

এবিষয়ে‎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘সবকিছু প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ধীরে ধীরে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে।’