জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দীর্ঘদিন ধরে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মসজিদের মুয়াজ্জিনরা। যেন পাচঁবেলা আজান দিলেও দু'বেলা খাবার জোটানো দায়। সরকারি গেজেট অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন কাঠামো কার্যকর না হওয়ায় ন্যায্য বেতন ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ অনুযায়ী মুয়াজ্জিনদের জন্য ১১তম গ্রেডের বেতন স্কেল নির্ধারিত রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৬তম গ্রেডে বেতন দেওয়া হচ্ছে তাদের। আবার নতুন ৩টা হলে ১৮তম গ্রেডে দেওয়া হচ্ছে বেতন, যা গেজেটের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসমঞ্জস। এমনকি মুয়াজ্জিন পদে একই দিনে নিয়োগ পেলেও বেতন কাঠামোতে ভিন্নতা রয়েছে যা অন্যায্য ও সুস্পষ্ট বৈষম্য।
অন্যদিকে গেজেটে ইমামদের বেতন ৯ম গ্রেড (২২,০০০-৫৩,০৬০)/- থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ গ্রেড (১১,৩০০-২৭,৩০০)/-, পেশ ইমাম পদে ৬ষ্ঠ গ্রেড (৩৫,৫০০-৬৭,০১০)/- থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ গ্রেড (১২,৫০০-৩০,২৩০)/- এবং সিনিয়র পেশ ইমাম পদে ৫ম গ্রেড (৪৩, ০০০-৬৯,৮৫০)/- থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেড (৩৫,৫০০-৬৭,০১০)/- কার্যকর আছে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি মসজিদে নেই কোনো ইমাম। 'মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬' অনুযায়ী প্রতিটি মসজিদে একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও একজন খাদেম নিয়োগের উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ মসজিদে শুধুমাত্র একজন মুয়াজ্জিন দিয়ে তিন পদের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যার ফলে একটি মুসলিম প্রধান জনগোষ্ঠীর মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি একজনের উপর তিনজনের কর্মভার চাপিয়ে অনবরত জুলুম করা হচ্ছে এই মুয়াজ্জিনদের উপর।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম ড. মাহমুদুল ইসলাম ইউসুফ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্থগিত স্থবিরতা বিদ্যমান ছিল। এক ইমামের পদে একজন সহকারী ইমামকে নিয়োগ দিয়ে তাকে দিয়েই ইমামতি, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ পরিষ্কার করা সকল কাজ একজনকে দিয়েই করানো হচ্ছিল। আমরা চাচ্ছি আমাদের জন্য ২০০৬ সালের গেজেট অনুসারে নিয়োগ এবং বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়া হয় তাহলে আমাদের সাথে চলে আসা বৈষম্য দূর হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “মুয়াজ্জিনদের বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আমরা সচেতন। বিষয়টি আমরা পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করব এবং সরকারি গেজেট অনুযায়ী বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করব। তবে এবারের সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডায় এটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদগুলোতে ইমাম নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইমাম নিয়োগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে জনবল নিয়োগের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি।”
সংশ্লিষ্টদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর এমন বৈষম্য কখনোই প্রত্যাশিত ছিল না। সরকারি গেজেটের নির্দেশনা মেনে মুয়াজ্জিনদের বেতন স্কেল যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হলে ধর্মীয় কাজের প্রতি মানুষের আস্থা কমতে পারে এবং মুয়াজ্জিনদের কর্মপ্রেরণাও হ্রাস পাবে।