রাজধানীর আবুজর গিফারী কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছে কলেজেটির গভনিং বডির সিংহভাগ সদস্য, শিক্ষক, কর্মচারি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি গভানিং বডির সদস্য জুলেখা বেগম বলেন, এডহক কমিটির মেয়াদের শেষ দিন অর্থাৎ ১০ মার্চ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে সভাপতির একক সিদ্ধান্তে কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক অব্যাহতি দেন এবং উপাধ্যক্ষ কে তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পন করেন, যা পুরোপুরি অবৈধ। উপাধ্যক্ষ চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির লোভে পড়ে সভাপতির নির্দেশে অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ইতোমধ্যে গভনিং বডির ১১ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জন সদস্যই সভাপতি মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন। তারপরও সভাপতি কোন কিছুর কর্ণপাত করছে না।
তিনি বলেন, ৫ আগষ্টের পর স্বৈবাচারের দোষরদের সাথে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের অডিও রেকর্ড ও ভিডিও রেকর্ড ছিল। তিনি সেখান থেকে সব তথ্য তড়িঘরি করে মুছে ফেলান। সেটা আর যেন কেউ রিকভারী করতে না পারে সেজন্য কলেজের অধ্যক্ষের রুম সহ আরো কিছু রুমে স্থাপন করা হয়েছে নতুন সিসি ক্যামেরা। আর এ কাজে সহযোগিত করেছেন আইসিটির শিক্ষক মো. মেহেদী হাসান হাওলাদার। যার বর্তমান নিয়ন্ত্রণ তার হতেই রয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ প্রতিটি সভায় সভাপতির অনুকূলে থাকা আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের অনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইতেন। তার কথা মতো না চললে শিক্ষক -কর্মচারিদের চাকুরিচ্যুত ও বেতন বন্ধের হুমকি দেন। ইতোমধ্যে সহযোগী অধ্যাপক জুলেখা বেগমের বেতন বন্ধ করে রেখেছেন।
তিনি আরও জানান, এডহক কমিটির প্রতিটি সভাতে যোগদানের জন্য সভাপতির সম্মানী ৬০০০টাকা এবং অন্যান্য সদস্যবৃন্দের জন্য জনপ্রতি ৩০০০ টাকা নির্ধারিত ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সভাতেই সম্মানী বাড়িয়ে ৬০০০টাকা থেকে ২০,০০০ টাকায় উন্নীত করার জন্য অধ্যক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। অধ্যক্ষের অনুরোধক্রমে পরে তা ১২০০০টাকা নির্ধারন করা হয় যা অনৈতিক, অগ্রহণযোগ্য ও দুর্নীতির শামিল।
আওয়ামী পন্থি শিক্ষক কলেজের সকল অপকর্মের মুলহোতা মো. সোবহান খন্দকারকে কমিটিতে না রাখার জেদ ধরে সভাপতি নবীণ বরণের মতো অনুষ্ঠানকেও বানচাল করেছেন। উল্লেখ্য, এই শিক্ষক ৩রা আগষ্ট গনভবনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সভায় যোগ দেন। উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে নিরীক্ষকের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দের বেতন বন্ধের হুমকিতে কলেজ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানান তারা।
মনির হোসেন নামে একজন অভিভাবক জানায়, কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক মো. শাহিন একাধিকবার তাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে। এমনকি কলেজ থেকে তার ছেলের ভবিষ্যাতের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার জন্য সজাগ থাকতে বলেন। এই প্রভাষক শাহিন ফ্যাস্টিস আওয়ামী লীগ আমলে ঢাকা কলেজ শাখার ছাত্র লীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিত। তবে ৫ আগষ্ট্রের পট পরিবর্তনের পর তিনি নিজেকে ছাত্র দলের সহ-সভাপতি পরিচয় দেন। একই মানুষ কিভাবে দুটি সংগঠনের সহ-সভাপতি হিসাবে কিভাবে থাকতে পারে বলে প্রশ্ন তোলেন ওই অভিভাবক।