জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের সন্তান মাজহারুল ইসলাম। তিনি ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট থেকে নির্বাচিত হলেন। জুলাই আন্দোলনের তার ব্যাপক অবদান ছিল। কিন্তু তার আরও একটি পরিচয় আছে, তিনি আলোচিত কিশোর জুলাইযোদ্ধা ফাইয়াজের বড় ভাই। মাজহারুলের অবস্থান শনাক্ত করতেই তার ছোট ভাই হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে তুলে নিয়েছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

১৭ বছর বয়সী কিশোর ফাইয়াজকে আটকের ৩ দিন পর ফাইয়াজকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গায়ে বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত কিশোরের হাতে লাগানো হাতকড়ায় মোটা রশি লাগিয়ে আদালতে নেওয়ার দৃশ্য পুরো দেশকে নাড়া দিয়েছে। তার এ ঘটনায় জাতিসংঘও বিবৃতি দিয়েছিল। সারাদেশে আলোচিত হয়ে ওঠে কিশোর ফাইয়াজ। তার বড় ভাই মাজহারুল এখন জাকসুর জিএস।

মাজহারুল লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার এলাকার বাসিন্দা এবং ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম মঞ্জুর বড় ছেলে।

মাজহারুলের বাবা আমিরুল ইসলাম জানান, মাজহারুল খুব ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এবং ভদ্র স্বভাবের। ২০১৬ সালে সে নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি সে অনেক ধরনের সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় মাজহারুলের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তার সন্ধান জানতেই ২৪ জুলাই আমার ছোট ছেলেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তিন দিন পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ায় তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়। ১৭ বছর বয়সী ফাইয়াজকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে তোলে পুলিশ। আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করে। এতে দেশবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফাইয়াজ কিশোর জুলাইযোদ্ধা হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পায়। তার ইস্যুতে জাতিসংঘও বিবৃতি দিয়েছে।

গত ২১ আগস্ট একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে বড় ভাইকে শুভকামনা জানায় ফাইয়াজ। স্ট্যাটাসটিতে ফাইয়াজ লিখেছিল, জুলাই বিপ্লবে ভাইয়া জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। আমাকে টর্চার করে ভাইয়ার লোকেশন জানতে চেয়েছিল সেই মুহূর্তে। আমার থেকে লোকেশন নিতে না পেরে তারা ভাইয়ার মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিং করেছিল। কিন্তু ভাইয়াকে ধরতে পারেনি কৌশল অবলম্বনের কারণে।

ফলাফল ঘোষণার পর জাকসুর নব নির্বাচিত জিএস মাজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেদিন শিক্ষার্থীরা আমাদের স্বীকৃতি দেবে যে, আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পেরেছি। এই ক্যাম্পাসের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যারা আমোদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাদের আমানতের ভার আমরা রক্ষা করতে পেরেছি, সেই দিন আমরা বলতে পারব আমরা বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।’

প্রসঙ্গত, শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং কমিশনের সদস্য সচিব একেএম রশিদুল আলম আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট থেকে তিনি জিএস নির্বাচিত হন। ২৫টি পদের মধ্য ২০টিতেই জয় পেয়েছে এ জোট। জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু। এজিএস (ছাত্র) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (ছাত্রী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন। তারা দুজনই ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী।