জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কুরআন এন্ড কালচারাল ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত "৫ম কুরআনের পাঠ অনুবাদ প্রতিযোগিতা" এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৬মে) বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সেমিনার কক্ষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রতিযোগিতার ৫০ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল বাক্বী বলেন, যখন কেউ নিষিদ্ধতা থেকে বেচে থাকে সে পবিত্র হয়। যখন কেউ পবিত্রতা লাভ করে তখন সে সম্মানিত হয়। যারা মসজিদুল হারামের দিকে অগ্রসর হয় তারা চূড়ান্তভাবে সম্মানিত হয়। এর সূত্র ধরে পরকালে তারা জান্নাত প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করবে। মানবজীবনের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় পাওয়া।

কোরানের গুরুত্ব আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি জীবনের সংজ্ঞা কোরানের আল ইমরান সুরায় খুঁজে পেয়েছি। যেটি আর কোথাও পাইনি৷ কোরান অর্থসহ অন্তত ছয়বার পড়তে আহ্বান করেন। কোরানের কোন ইনফরমেশন তর্জমা করে শেষ করা যাবে না। কোরানের জ্ঞান অসীম।

এ সময় অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, অগস্ট বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী ভাইবোনেরা একটা পরিবর্তনের কথা বলেছেন। আমরা যদি নিজেরা নিজেদের পরিবর্তন না করি তাহলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না।

আমাদের সমস্যা হলো আমরা অন্যের পরিবর্তনের কথা বলি, সমাজ-রাষ্ট্র পরিবর্তনের কথা বলি। অথচ, আমরা নিজেদের পরিবর্তন করছি না। আমাদের নিজেদের পরিবর্তন করার জন্য যে আলোর দরকার সে আলোকে আমরা কখনো জ্বালাই না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে আলো প্রয়োজন সেটা হলো আল-কোরান।

কোরান অনুবাদ পাঠ প্রতিযোগিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যক্তিজীবনকে আলোকিত করতে যা যা প্রয়োজন তার সবকিছু আল্লাহ তা'লা সূরা ইউসুফ এবং সূরা ক্বা'ফে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত সমস্যা, হতাশা, পারিবারিক সমস্যা সহ এসব রকম সমস্যার সমাধান সূরা ইউসুফে আছে।

প্রতি জুমার দিন সুরা ক্বা'ফ তিলাওয়াত করলে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহ তালে হেফাজত করবেন। অহমিকা, অহংকার, ক্ষমতার দাপটে আমরা অন্ধ হয়ে গেছি। সূরা ক্বা'ফে এর শিক্ষা রয়েছে।

সূরায় হজরত মুসা (আঃ) এবং খিজির (আঃ) এর ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন নিজেকে জ্ঞানী ঠিক না। যে যত বেশি জ্ঞানী সে ততো বেশি বিনয়ী। মানুষের জীবনে যত বড় দুর্ঘটনায়'ই ঘটুক এর পেছনে নিশ্চয়ই কল্যাণ রয়েছে এই শিক্ষা সূরায় বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কোরান এমন এক কিতাব এর যত গভীরে যাবেন ততো বেশি লাভবান হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব বলেন, কোরান সম্পর্কে জানা মুসলিম হিসেবে আবশ্যিক। কোরান সঠিকভাবে শিখতে হবে, শিখে আমল করতে হবে এবং অন্যকে বলতে হবে। যারা কোরান পাঠ অনুবাদ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকটি দিক থেকে উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা-সংস্কৃতির পাশাপাশি ইসলামি চর্চা হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে জায়গা করে নিবে এই আশা করছি।

এ সময় কোরান এন্ড কালচারাল স্টাডি ক্লাবের (ফিমেইল সেকশন) উপদেষ্টা সহযোগী অধ্যাপক শামিমা নাসরিন জলি বলেন, আমাদের চরিত্র এমন হওয়া উচিত, যেন মানুষ আমাদের দেখে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আমরা যদি নিজেদের চরিত্রে ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারি, তবে কোনো ভাষণ বা বই ছাড়াও মানুষ বুঝে যাবে—ইসলাম আসলে কী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত দান করেছেন। কেন? কারণ, তিনি আগে নিজ চরিত্র, আখলাক ও বিশ্বাসযোগ্যতা দ্বারা সমাজে পরিচিত হয়েছিলেন। মানুষ তাঁকে 'আল-আমিন' নামে ডাকত। এরপর তিনি যখন নবুয়তের ঘোষণা দেন, তখন মানুষ তাঁর কথাকে গুরুত্ব দেয়।

তিনি আরও বলেন, আজকাল পর্দানশীল মেয়েদের সম্পর্কেই অনেক অভিযোগ আসে। অথচ যে মেয়েটা পর্দা করছে, তাকেই তো দেখে অন্যরা ধারণা করবে—ইসলাম এমনই। কিন্তু যদি চরিত্রে সৌন্দর্য না থাকে, তবে পর্দা শুধু বাহ্যিক হয়ে যায়। এটি ইসলামের আদর্শ প্রতিনিধিত্ব করে না।

তিনি যুক্ত করেন, রমাদান মাসে আমরা অনেক খতম কুরআন করি—৩, ৪ বা ৫ বার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে রমাদান শেষে সেই কুরআনের শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হয় না। আমরা তেলাওয়াত করি, কিন্তু তার অর্থ, ব্যাকরণ ও তাৎপর্য বুঝে গ্রহণ করি না। অথচ কুরআনের ব্যাকরণ, এর ভাষার গঠন ও গাম্ভীর্যের মধ্যে যে অপূর্ব মাধুর্য আছে, তা হৃদয় ছুঁয়ে যায়—যদি আমরা তা বুঝতে চেষ্টা করি।