চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী রোববার থেকে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম ও পরিবহন পূর্বের নিয়মে চলবে। অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন সেশন জটে না পড়ে সেজন্য দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা চালু করা হচ্ছে।”
এদিকে প্রায় ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও জ্ঞান ফিরেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের। গত ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোবরা গ্রামের অস্ত্রধারী স্থানীয় সন্ত্রাসী ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে। আঘাতের পর পার্কভিউ হাসাপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে আইসিইউতে রাখেন। এরপর থেকে প্রায় ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও জ্ঞান ফিরেনি তার। ইমতিয়াজ সায়েমের মা শাহনাজ আমির বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, আমার ছেলেকে যাতে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে আমার কোলে ফিরিয়ে দেন। চিকিৎসকরা আমাদের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানাচ্ছেন। তার অবস্থা এখনও অপরিবর্তনীয়।
সায়েমের সঙ্গে একই সংঘাতে আহত হয়েছেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মামুন মিয়া। তার মাথার খুলি খুলে রাখা হলেও, অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জ্ঞান ফিরেছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় বর্তমানে খুলিহীন মাথা নিয়ে তাকে কেবিনে রাখা হয়েছে। খুলি না থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে মাথায় লিখে দেওয়া হয়েছে ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’, যা বুধবার রাত থেকে ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মামুনের বড় ভাই টাঙ্গাইলে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, মামুনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সে কথা বলতে পারছে। তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে।
পার্কভিউ হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম রেজাউল করিম বলেন, সায়েমের মাথায় ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত ছিল। খুলির ভেতরের অংশ ও রক্তনালী ছিঁড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরেনি। তবে মামুনের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সে আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে। এখন সুস্থ হলেও মাথার খুলিটি প্রতিস্থাপন করতে মাস দেড়েক সময় লাগবে।
গত ৩০ আগস্ট রাতে চবি দুই নম্বর গেট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় প্রবেশ নিয়ে এক ছাত্রী ও নিরাপত্তারক্ষীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরদিন রোববার সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর ছদ্মবেশে অস্ত্রধারী স্থানীয় সন্ত্রাসী ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।