রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষিত সিডিউলে নির্বাচন স্থগিত করার প্রতিবাদে শুক্রবার (২ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে এক্স স্টুডেন্ট ফোরাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কয়েকশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেন।

মানববন্ধনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের লাইফ মেম্বার এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষিত নির্বাচন স্থগিত করে এডহক কমিটি প্রমান করেছে তারা নিদিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্যশীল। এই নির্বাচন স্থগিতের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশে নব্য ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন দৃশ্যমান। কেন এই নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে সেটি জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের নির্বাচন বানচাল করছে তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে ব্যর্থ হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে না। নতুন এডহক কমিটি গঠন করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে ড. হেলাল বলেন, নতুবা এক্স স্টুডেন্টরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবে। ভিসি সহ সংশ্লিষ্টদের দপ্তর ও বাসভবন ঘেরাও করা হবে। কোন অপশক্তি দ্বারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে বিতর্কিত করা সহ্য করা হবে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এক্স স্টুডেন্ট ফোরামের সেক্রেটারী দেলাওয়ার হোসেন বলেন, রুয়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন নির্বাচন না দিয়ে অবৈধভাবে রুয়া দখল করে রেখেছিলো ফ্যাসিবাদের দোসররা। তারা নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তির মত রুয়াকে ব্যবহার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনদের এই সংগঠনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আসতে দেওয়া হয়নি, সদস্য হতে দেওয়া হয়নি, কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ফ্যাসিবাদের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভালো চিন্তা করে একটি এডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন করে। গঠিত নির্বাচন কমিশন সিডিউল ঘোষণা করলে সারা দেশ থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে লাইফ মেম্বার হলো, মনোনয়ন কিনে যথাযথভাবে ১২৫ জন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলো। যখন শুধুমাত্র নির্বাচনের দিনক্ষন অপেক্ষা করছিলো প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা, ঠিক তখন একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে নির্বাচন স্থগিত করতে নাটকীয়তা শুরু করে। একপর্যায়ে নির্বাচন কমিশনকে তারা হুমকিÑধমকি দিতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রারের বাসভবনে ককটেল ফাটিয়ে বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ফলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান সহ ২জন পদত্যাগ করে এবং এডহক কমিটি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। একটি রাজনৈতিক সংগঠন নিজেদের পরিচয় দিয়ে নির্বাচন বানচালের মত ঘৃণিত কাজ করছে। তাদের এমন কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি এডহক কমিটিকে মেরুদন্ডহীন দাবি করে বলেন, নির্বাচন স্থগিত করে আপনারা রুয়ার সদস্যদের সাথে তামাশা ও প্রতারণা করেছে। সুতরাং এই কমিটির উপর আর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা যায় না। নতুন এডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন করে রুয়া'র নির্বাচন দিতে হবে। নতুবা প্রতারণার দায়ে এডহক কমিটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি কঠোর আন্দোলনে যেতে আমরা বাধ্য হবো।

রুয়ার অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী পেট্রো বাংলার সাবেক ব্যবস্থপনা পরিচালক এবিএম কামরুজ্জামান পুলক বলেন, রুয়া গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার পরপরই ফ্যাসিবাদের দোসররা রুয়া দখল করে নিয়েছে। সেখানে ফ্যাসিবাদের দোসর ব্যতিত অন্য কাউকে স্থান দেওয়া হয়নি, সদস্য করা হয়নি, কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলে রুয়াকে পুন:গঠনের উদ্যোগ নেয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি সহ সকল স্তরের প্রাক্তন ছাত্ররা রুয়ার সদস্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রুয়ার নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত সিডিউলে নির্বাচন স্থগিত করতে নব্য ফ্যাসিবাদ উঠেপড়ে লেগেছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এডহক কমিটি নব্য ফ্যাসিবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নির্বাচন স্থগিত করেছে। এডহক কমিটির এমন ঘোষণায় একজন প্রার্থী হিসেবে তীব্র ঘৃণা ও নিন্দার সাথে প্রত্যাখান করছি। অনতিবিলম্বে নতুন এডহক কমিটি গঠন করে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। নতুবা কঠোর আন্দোলনে যেতে আমরা বাধ্য হবো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এ.কে.এম কামরুজ্জামান কোরবান বলেন, অতীতে রুয়ার নেতৃত্ব ছিল ফ্যাসিবাদের দোসররা। তারা পরাজিত হয়ে এখন নতুন করে আরেকদলকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহন করেছে। তবে কোন অপচেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না।

২০০৭-০৮ সেশনের পপুলেশন সাইন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা মর্মাহত যখন পুরো দেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সেই সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিবাদের চিত্র ফুটে উটেছে। কেন রুয়ার নির্বাচন স্থগিত করতে হয়েছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, একক কোন ব্যক্তি বা দলের স্বার্থ হাসিল করতে দেওযা হবে না। অনতিবিলম্বে রুয়ার ঘোষিত সিডিউলে নতুন এডহক কমিটি দ্বারা নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

আইন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ঢাকা বারের আইনজীবি আবদুর রাজ্জাক বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরো যুগপোযগী করে গড়ে তুলতে সাবেক ছাত্রদের অংশগ্রহন ও পরামর্শের জন্য ১৯৭৪ সালে রুয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রুয়া সকল ছাত্রছাত্রীর ন্যায্য দাবি আদায়ে ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু বিগত সময়ে অবৈধভাবে একটি চক্র রুয়া দখল করে নিজেরা সুবিধা ভোগ করেছে। এখন ঐ সুবিধা আরেকটি চক্র লুপে নিতে রুয়ার ঘোষিত নির্বাচন স্থগিত করার মতো ঘৃণিত কাজ করেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে এডহক কমিটিও লিপ্ত হয়েছে। অনতিবিলম্বে চলমান এডহক কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে রুয়ার নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ড. ফেরদৌস আলম ও তাফসীর সহ প্রাক্তন ছাত্ররা তাদের বক্তব্যে রুয়ার নির্বাচন স্থগিত করায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে নতুন এডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন করে রুয়ার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দাবি জানান। অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান, কামরুল ইসলাম, আব্দুল হান্নান, মোহাইমিন, রাসেল, বোরহান সহ কয়েকশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেন।