জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উদীচীর রুমে ‘গাঁজা সেবনের’ সংবাদ প্রকাশের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিককে ঘিরে ধরে ‘মব সৃষ্টির’ অভিযোগ উঠেছে বাম সংগঠনের বেশকয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ সময় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জবি শাখার সভাপতি ইভান তাহসিবের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইউছুব ওসমান বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন টিএসসি এলাকায় চা পান করতে গেলে ইভান তাহসিব উদীচীর নেতাকর্মীসহ ১৫-২০ জন বামপন্থি নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের ঘিরে ধরে মব সৃষ্টির চেষ্টা করেন বলে জানা যায়।
এর আগে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) জবির উদীচীর রুমে গাজা সেবনের বিষয়টি নিয়ে আজ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সংবাদ ঘিরেই দুই সাংবাদিককে হেনস্তার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠকরা।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, আজকের প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন তারা। কেন এ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, এ বিষয়ে উচ্চস্বরে প্রশ্ন তোলেন এবং উত্তেজিত আচরণ করেন।
সাংবাদিকরা জানান, তারা যেকোনো বিষয়ে প্রতিবাদ বা ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণের অনুরোধ জানালে বাম নেতারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ঘটনার একপর্যায়ে মেহেদী ও ইউছুবকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সালমান ইসলাম রিয়ন বলেন, মেহেদী ভাই এবং ইউছুব ভাই সেখানে দাঁড়িয়ে চা পান করছিলেন। তখনই ইভানসহ বাকিরা তাদেরকে ঘিরে ধরে তাদের ওপর চড়াও হোন। উচ্চবাচ্য শুরু করেন। তাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘চায়ের দোকানের সামনে মোস্তাকিন নামের একজন আমাকে এসে বলে ভাইয়া আপনি তো আমাকে চেনেন। আমি বললাম হ্যাঁ চিনি। তখন সে উত্তরে বলে ‘ভাই, আপনি একজন খারাপ মানুষ।’ এই কথাটা ৫-৭ বলে আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। আমি সামান্য উত্তেজিত না হয়েও তার সাথে কথা বলি। এরপর পাশ থেকে ইভান এসে আমাদের বলে কালকে আলোচনা হয়েছে নিউজ না করার জন্য। আজকে এভাবে তথ্য প্রমাণ ছাড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিউজ করলেন। আপনাদের ইথিকস নাই।’
জবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইউছুব ওসমান বলেন, ‘আমি এবং আমার সভাপতি টিএসসি তে চা পান করছিলাম। এসময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসিভ উদীচীর নেতাকর্মীসহ বাম নেতাদের সাথে নিয়ে এসে আমাদের ঘিরে ধরেন। এরপর ইভান আমাদের সাথে উচ্চবাচ্য শুরু করেন। তারা আমাদের সাথে উচ্চকণ্ঠে নিউজ কেন প্রকাশিত হয়েছে তার কারণ জানতে চান। তখন আমরা বলি, সংবাদ প্রকাশের মতো ঘটনা ঘটেছে বলেই নিউজ করা হয়েছে। তখন ইভান চিৎকার করে প্রমাণ দেখানোর কথা বলে। তখন আমি বলি, আপনি যথাযথ জায়গায় যোগাযোগ করেন, সেখানেই প্রমাণ উত্থাপন করা হবে। তখন ইভান বলে, এগুলা সাংবাদিকতার ইথিকসের মধ্যে পড়েনা। তখন আমরা বলি, আপনাদের কাছ থেকে আমাদের ইথিকস শেখার কেউ নেই। অভিযোগ থাকলে যথাযথ জায়গায় গিয়ে অভিযোগ করুন। তখন আমরা আপনাদের যেভাবে দেখার দেখে নেবো। তখন আমি বলি, আপনারা সবাই এখানে মব তৈরির চেষ্টা করছেন। এরপর আমরা সেখান থেকে চলে আসি।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসিব সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আসলে মব কিছু হয়নি। আমি আসলে খুবই উত্তেজিত স্বরে কথা বলেছিলাম। আমার আসলে সাংবাদিক সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে এভাবে উচ্চস্বরে কথা বলা উচিত হয়নি। তবে এ ঘটনায় তাদের যে অবস্থান সেটা গ্রহণযোগ্য না।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জবি প্রেসক্লাবের পাশের রুমে উদীচীর কক্ষে তীব্র গাজার গন্ধ পেয়ে কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি জানতে গেলে উদীচীর একাধিক সদস্য তাদের ওপর চড়াও হন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় আজ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।