খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করতে কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলটি দাবিগুলো পর্যালোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাস দিয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ইউজিসি প্রতিনিধিদল কুয়েটে পৌঁছায়। তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তনজিমউদ্দীন খান, বুয়েটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্নসচিব আহমেদ শিবলী।
প্রতিনিধিদলের সসদস্যরা প্রথমেই অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে। তারা অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা চালান। যদিও তারা একজনমাত্র শিক্ষার্থীকে অনশন থেকে সরিয়ে আনতে সফল হন। অন্য শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যেতে দৃঢ় থাকেন।
পরবর্তী সময়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর সংঘটিত হওয়া হামলা, তাদের আন্দোলন ও দাবিগুলো তুলে ধরেন।
বৈঠকে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা পুরো চিত্র প্রতিনিধিদলের কাছে উপস্থাপন করেছেন এবং ভিসি কর্তৃক মিডিয়া ও শিক্ষকদের কাছে যেসব গুজব উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো খণ্ডন করেছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, প্রতিনিধিদল তাদের যথাযথ বিচারের আশ্বাস দিয়েছে। প্রতিনিধিদল বলেছে, একটা বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রতিনিধিদল তাদের জানিয়েছে তারা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের সুপারিশ পেশ করবে। সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষার্থীরা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, দুই মাস আগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হলেও সেটার কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বরং বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা খবর পেয়েছেন স্মারকলিপির ব্যাপারে অনেকেই অবগত নন।
এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছান শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘এই গরমে তোমরা যারা অনশন করছ এবং অনশনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানের দৃঢ়তা তুলে ধরেছ, তোমাদের বলতে চাই, প্রক্রিয়া চলমান আছে। খুব শিগগির তদন্ত কমিটি আসবে। তারা তোমাদের সঙ্গে কথা বলবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে পাঁচ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত তারা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বৈশাখের তীব্র গরমে অনশনে আন্দোলনরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। অনেকের শরীরে রক্তচাপ কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার চত্বরে তারা এ অনশনে বসেন। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রোকেয়া হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন ছাত্রীরা। এ সময় ছাত্র হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের তালা ভাঙতে সহায়তা করেন।
অপরদিকে কুয়েটের চলমান আন্দোলনের বিষয়টি বর্তমানে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুধবার (২৩ এপ্রিল) ক্লাস বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। এ সময় বুয়েট, জবি, চুয়েট, কুয়েট, ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে এবং আবাসিক হলগুলো ২ মে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গত দুই দিন ধরে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবারদুপুরে নিজেরাই একের পর এক হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।