জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটির সভায় এক আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও এক বামপন্থী শিক্ষকের উপস্থিতি ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সাক্ষ্য দিতে আসা শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সভাস্থল ছেড়ে বের হয়ে যান ওই ২ জন শিক্ষক।

রবিবার (১৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের কার্যালয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় এ ঘটনা ঘটে। এসময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে কমিটির সভা থেকে বের হয়ে যান কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ।

এসময় শিক্ষার্থীরা “মদদদাতা বিচার করে, প্রশাসন কি করে”, “লীগের দোসর বিচার করে, লজ্জা লজ্জা”, “আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও” প্রভৃতি শ্লোগান দেন।

জানা গেছে, শিক্ষক সমিতির কাছে দেওয়া এক চিঠিতে অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তিনি বলেন, “১৭ মার্চ সিন্ডিকেট সভায় যেসব শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন, তাঁদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ জন্য জরুরি সাধারণ সভা ডাকার প্রয়োজন।” এছাড়া ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ আওয়ামী পন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত এবং তার বিরুদ্ধে তার বিভাগের হামলাকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে তদবির করার অভিযোগ রয়েছে।

সাক্ষ্য দিতে আসা ৪৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তদন্ত কমিটিতে এমন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন, যিনি নিজেই তদন্তকে প্রভাবিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সাক্ষ্যের গোপনীয়তা কীভাবে রক্ষা পাবে? আমরা সুষ্ঠু বিচার পাব কি না, তা নিয়েও শঙ্কায় আছি।”

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, “প্রশাসন তদন্ত কমিটিতে আওয়ামী দোসরদের বসিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করছে। সাক্ষীদের তথ্য ফাঁস থেকে শুরু করে তদন্তে নানা অসংগতি দেখা গেছে। আজও উপাচার্য কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি।”

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আমরা যথাযথ নিয়ম মেনেই তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনরা পদাধিকারবলে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কারও রাজনৈতিক পরিচয় নয়, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভাতেই নেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে নয়জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে মোট ১৯ শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠিত হয়েছে “কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ, ১৯৮০” এর ৫(ক)(২) ধারা অনুসারে।