স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৃতিত্বে দেশের কৃষি গবেষণায় যুক্ত হলো আরেকটি সাফল্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের দুই খ্যাতিমান গবেষক প্রফেসর ড. এম. ময়নুল হক এবং প্রফেসর ড. মোঃ মসিউল ইসলামের নেতৃত্বে উদ্ভাবিত হয়েছে উচ্চ লবণ সহিষ্ণু এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি নতুন গমের জাত—‘জিএইউ গম ১। এটি দেশের ইতিহাসে ১২ ডিএস/এম লবণমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম প্রথম প্রিমিয়াম গুণমানের গম, যা উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

এই জাতটি শুধু লবণ সহিষ্ণু নয়, বরং এটি অধিক ফলনশীল, উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবি উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১-এ, যা দেশের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী মাঠ পর্যায়ের গবেষণা, ফলন মূল্যায়ন এবং দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় কৃষকের মাধ্যমে বাস্তব চাষ পরীক্ষা শেষে জাতটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ডের সুপারিশক্রমে ১৭ জুন ২০২৫ তারিখে ‘জিএইউ গম ১ চাষের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

‘জিএইউ গম ১ গড় ৯৫-১০০ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হয়, যা আমন মৌসুমের ধান কাটার পর চাষের জন্য আদর্শ। স্বাভাবিক মাটিতে এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪.৫ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩.৭৫ টন, যা প্রচলিত জাতগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এছাড়া এর গাছ বড়, কান্ড মজবুত এবং শীষে গুটির সংখ্যা বেশি হওয়ায় খড়ের পরিমাণও বেশি, যা গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।

এই জাতে প্রোটিনের মাত্রা বেশি এবং এতে রয়েছে পর্যাপ্ত গ্লুটেনিন, যা শরীর গঠনে সহায়ক, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং এটি সহজে শরীর শোষণ করতে পারে। ডিইউএস বিশ্লেষণে এটি ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। রোগপ্রতিরোধী জাত হিসেবে এটি ব্লাস্ট, রস্টসহ অন্যান্য রোগে কম আক্রান্ত হয় এবং গড় ফলনে ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দিতে সক্ষম।

প্রধান উদ্ভাবক প্রফেসর ড. মোঃ মসিউল ইসলাম বলেন, “জিএইউ গম ১ কেবল একটি ফসল নয়, এটি উপকূলীয় কৃষকের সীমাবদ্ধতা জয় করার হাতিয়ার। এই জাতটি লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম এবং অধিক ফলন দেয়, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, “আমরা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছি, এই জাতটি কৃষকদের জন্য একটি টেকসই ও লাভজনক সমাধান হতে পারে। আশা করছি এটি দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে।

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই জাতের উদ্ভাবন কেবল গাকৃবির নয়, বরং দেশের কৃষি খাতের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন। উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে কৃষি চাষে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা মোকাবেলায় এই জাত কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও বলেন, “জিএইউ গম ১ হলো টেকসই কৃষির প্রতীক। এটি কৃষকদের আয়ের পথ প্রশস্ত করবে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।

উপাচার্য গবেষণা সংশ্লিষ্ট সকল বিজ্ঞানী, গবেষণা সহকারী ও ল্যাব টিমের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উন্নত পুষ্টিগুণ, উচ্চ ফলন, লবণ সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা—এই চারটি গুণে বলীয়ান ‘জিএইউ গম ১ জাতটি দেশের কৃষিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এটি শুধু কৃষকের জন্য নয়, বরং দেশের জন্যও একটি টেকসই ও লাভজনক অর্জন।