দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) হল সংসদ, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাস এখন উৎসবমুখর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণা চলছে অ্যাকাডেমিক ভবন সংলগ্ন জায়গা, আবাসিক হল, মেস ও আড্ডাস্থল। প্রার্থীরা দলবেঁধে শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন, করছেন কুশল বিনিময়, হাতে তুলে দিচ্ছেন লিফলেট ও ইশতেহার।

এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোটগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। সেই হিসেবে আজ মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের গেটসমূহ, প্রতিটি অ্যাকাডেমিক ভবনের গেট, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহণ চত্বর, প্যারিস রোডে প্রচারণার মাধ্যমে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রার্থীরা লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইছেন। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাধরনের আকর্ষণীয় ভিডিও আপলোড করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা গেছে। ছাত্রদল সমর্থিত এক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীর বলেন, আমাদের প্যানেল এর বৈচিত্র্য নিয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদের অনেক ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। কারণ তাদেরকে ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। রবীন্দ্রনাথ একাডেমিক ভবনের সামনে প্রচারণা চালানোর সময় ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’র জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজার বলেন, প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তারা আমাদের কথাগুলো শুনছেন। তাদের সমস্যাগুলো বলছেন। ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তাই অনেকে জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে রাকসুতে ভোট দেবেন—এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়।

এর আগে গতকাল, রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গত রোববার রাত থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে। গতরাতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে দুটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালানো হয়েছে। গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-২৪ এবং মতিহার হলে যৌথ অভিযান চালায় পুলিশ, প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রশাসন। এ সময় দুই হলে মোট পাঁচজন অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে সোমবারের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, রোববার রাতে দুটি হলে তল্লাশি চালানো হয়েছে। মতিহার হলে অভিযান চালিয়ে তিনজন এবং বিজয়-২৪ হলে দুজন অনাবাসিক শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। তারা সবাই সংশ্লিষ্ট হলেরই ছাত্র। তবু আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, সোমবারের মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা খুবই দায়িত্বশীল আচরণ করেছেন।

নিরাপত্তা জোরদার

রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে রাবি ক্যাম্পাসে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ছয় প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র‌্যাব মোতায়েন থাকবে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরাও নিরাপত্তা কার্যক্রমে অংশ নেবেন। সোমবার বিকেল তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি), র‌্যাব ও বিজিবির প্রতিনিধিদের মধ্যে এক সমন্বয় সভা শেষে এসব তথ্য জানান আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, “ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ভোটগ্রহণ থেকে ফলাফল ঘোষণার পুরো প্রক্রিয়া পর্যন্ত আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা জায়গা ও কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে।” আরএমপি কমিশনার আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে কিছু বস্তি এলাকা রয়েছে, যেখানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে আমরা মনে করছি। সেই এলাকাগুলোতেও তল্লাশি চালানো হবে। এছাড়া, আবাসিক হলে যেন কোনো বহিরাগত অবস্থান না করে সে বিষয়েও আমরা নজরদারি করছি।” প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ. নজরুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে দুই হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নির্বাচন কমিশনের একটি বিশেষ টিমও মাঠে কাজ করবে; কোনো প্রার্থী বা প্যানেল আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”