ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, নারীদেরকে পিছনে রেখে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না। এগিয়ে যেতে হলে মা-বোনদেরকে সাথে নিয়েই যেতে হবে। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে নিবরাস মাদরাসার আয়োজনে ‘হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হযরত খাদিজা (রা.), হযরত আয়েশা (রা.) ও অন্যান্য নারী সাহাবিদেরকে নিয়েই রাসুলুল্লাহ (স.) সমাজ পরিবর্তন করেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এমনকি যুদ্ধের ময়দানেও মা-বোনদেরকে দেখা গেছে। আমরা যদি আমাদের মা, বোন ও কন্যাদেরকে অধিকহারে তাদের হাফেজা, আলিমা, মুহাদ্দিসা, চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানী বানাতে পারি তাহলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে। ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরা একটি নতুন দিনের স্বপ্ন দেখি। ভেদাভেদ আর নয়। আমাদেরকে একে অন্যের হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আগামীতে ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে আমরা যে কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বপ্ন সেটা পূরণেও নিবরাস মাদরাসা মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মানুষকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, আমি যদি অন্য একজনকে সম্মান না করি তাহলে তার কাছ থেকে সম্মান আশা করা যায়না। আমি যদি ঢিল ছুৃঁড়ি তাহলে পাটকেল খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি গীবত, পরনিন্দা ও পরচর্চা ত্যাগ করার জন্য সকলকে অনুরোধ করেন। এছাড়া, উপদেষ্টা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভেদাভেদ ভুলে সকলকে কালেমা তাইয়্যেবার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। পরে উপদেষ্টা নিবরাস মাদরাসার হাফেযুল কুরআন শিক্ষার্থীদের হাতে সংবর্ধনা ক্রেস্ট তুলে দেন।

নিবরাস মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব, ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্ণরের অন্যতম সদস্য আওলাদে রাসূল (সা) আল্লামা সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসাইন তাহের আহমাদ জাবেরী আল-মাদানী। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ভ্ূঁঞা, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান প্রফেসর মিঞা মো. নূরুল হক, হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শায়খুল র্কুরা হাফেয ক্বারী আব্দুল হক, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানী, নিবরাস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. মো. নুরুল্লাহ আল-মাদানী, সেক্রেটারি জেনারেল জনাব শাহ মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন মাদরাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মুতাছিম বিল্লাহ মাক্কী। মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ খান, হাফেয মাজহারুল ইসলাম আযহারী ও হামেদ জামিলের যৌথ সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে কবি নজরুল সরকারী কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহা. আতাউর রহমান, নিবরাস ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান আখতার হোসাইন, মোছলেহ উদ্দীন আলমগীর, মাদরাসার উপাধ্যক্ষ হোসাইন মোহাম্মদ ইলিয়াস, হাফেয মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান, আশরাফুল আলম, মীর মাহবুব হাসান, ছফিউল্লাহ মাক্কী, হাফেয আরিফুর রহমান আযহারী, হাফেয আবু তালহা, মহিউদ্দীন মাক্কী, দেলোয়ার হোসাইন, জুনাইদুল্লাহ আযহারী, ইমাম হোসাইন মাক্কীসহ নিবরাস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, ফাউন্ডেশনের সদস্যবর্গ, অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এবছর মাদরাসাটির ১৬৭ জন শিক্ষার্থীকে হিফজুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় যার মধ্যে ১৩২ জন বালক ও ৩৫ জন বালিকা। শিল্পী ওবাইদুল্লাহ তারেকের ইসলামী নাশিদ, ছোট্ট ছোট্ট ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের তেলাওয়াত, ইসলামী নাশিদ, আরবি ও ইংরেজি বক্তৃতাসহ আকর্ষণীয় পরিবেশনা অনুষ্ঠানকে ভিন্নমাত্রা দান করে। এ আয়োজনে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদানের পাশাপাশি তাদের পিতা-মাতাকেও বিশেষ হাদিয়া প্রদান করা হয়।