চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন ঘিরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে গুরুতর শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনের অভিযোগÑ নির্বাচন কমিশনের বেশিরভাগ সদস্য সরাসরি একটি বিশেষ দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর ফলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কঠিন হয়ে পড়বে।
গতকাল বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে থাকা অধ্যাপক ড. জাহিদুর রহমান প্রকাশ্যে ছাত্রশিবিরসহ মতাদর্শ বিরোধী সংগঠনের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন। এমন একজন শিক্ষক কমিশনে দায়িত্ব পালন করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
শিবিরের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর পর চাকসুর তফসিল ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঘোষণার পরপরই ক্যাম্পাসে সংঘটিত হামলা এবং প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। বক্তারা প্রশ্ন তোলেন— এসব ঘটনার পেছনে কোনো মহলের চাকসু বানচালের অপচেষ্টা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, চাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রশাসন একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই উপাচার্যকে সভাপতি পদে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় অনেক সম্পাদক পদ বাদ দেওয়া হয়েছে, আবার অপ্রয়োজনীয় সহ-সম্পাদক পদ যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষভাবে ‘দপ্তর সম্পাদক’ পদটি পুরুষদের জন্য সংরক্ষণ করে প্রশাসন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি স্পষ্ট না করে ছাত্রশিবিরকে নারী বিদ্বেষী প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, “গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি কেনো ওই পদটি কেবল পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট করেছিল, তা প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি এ সিদ্ধান্তের দায়ীদের পদত্যাগ করতে হবে।”
শিবির সভাপতি অভিযোগ করেন, প্রশাসন কোনো আলোচনা ছাড়াই ভোটার ও প্রার্থীদের বয়সসীমা তুলে দিয়েছে— যা একটি বিশেষ সংগঠনের সুবিধার্থে করা হয়েছে। এতে ছাত্রত্ব হারানো নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ করছে। কিন্তু জুলাই মাসের সহিংসতার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কোনো অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনেনি।
তিনি বলেন, “মানবিক কারণে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া শিক্ষার্থীদের সুযোগ একাডেমিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকতে পারতো। কিন্তু চাকসু নির্বাচনের জন্য সুযোগ দেওয়াটা শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে শিবির সভাপতি আরও বলেন, সভাপতির সীমাহীন ক্ষমতা কমিয়ে সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদকদের ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রশাসনের কিছু পক্ষ ব্যর্থতার দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। অথচ বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িত কিছু শিক্ষক সরাসরি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
শেষে তিনি বলেন, “ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময় ন্যায্যতার পক্ষে থেকেছে এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করেছে। আসন্ন চাকসু নির্বাচন ঘিরে সব অমীমাংসিত বিষয় দ্রুত নিষ্পত্তি করে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।”
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ, অর্থ সম্পাদক হাসান মোজাহিদ, প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞাসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।