ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে অবৈধ দোকান, উদ্বাস্তু ও ভবঘুরেদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) যৌথ উদ্যোগে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। তবে এ অভিযানে বাধা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কয়েকটি বাম সংগঠন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে এ অভিযান শুরু হয়। অভিযান চলে টিএসসি মেট্রোরেল স্টেশন এলাকা থেকে চারুকলা অনুষদ পর্যন্ত। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশ, সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘গ্রীন ফিউচার’-এর সদস্যরা অংশ নেন।

অভিযান চলাকালে গাঁজা ও ড্যান্ডিসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি যুবায়ের। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ঘটে। এর মধ্যে অনেকে মেট্রোর নিচে বা আশপাশের এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তাদের একটি অংশ মাদকসেবন ও বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত আর রাত হলে ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে লিপ্ত হয় তারা। তিনি আরও বলেন, এই ভবঘুরেদের আশ্রয়কে কেন্দ্র করেই মাদক কারবারি ও অপরাধচক্রগুলো সক্রিয় থাকে। তাই আমরা ডাকসুর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, শাহবাগ থানা পুলিশ ও মেট্রোরেল পুলিশের সহযোগিতায় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি।

অভিযানের সময় একজনের কাছ থেকে গাঁজা এবং আরেকজনের কাছ থেকে ড্যান্ডি উদ্ধার করা হয় বলে জানান এবি যুবায়ের। তিনি বলেন, এটি ছিল ডাকসুর পক্ষ থেকে একটি প্রাথমিক অভিযান। ভবিষ্যতে আমরা স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিতে চাই, যেন ক্যাম্পাসে নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকে।

তবে এই উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত না জানিয়ে রহস্যঝনক কারণে শুরু থেকেই বাধা দিয়ে আসছে কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন। তারা উদ্ভাস্তু ও হকারদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এসময় বিক্ষোভ-মিছিলে বাধা দিলে আহত হন প্রক্টরিয়াল টিমের কয়েকজন সদস্য। মিছিলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ ও ইসরাত জাহান ইমু, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ঢাকা নগর শাখর আহ্বায়ক নাইম উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাবিতে হকার বসতে পারবে না, সহকারী প্রক্টর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো প্রকার হকার বসতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে রোববার থেকে জিরো টলারেন্সে যাবে। এছাড়া বহিরাগত হকার, টোকাই নিয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছে তাদের চিহ্নিত করে শোকজ করা হবে বলেও জানান সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে শোকজ ও ন্যূনতম ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করতে হবে। বলে দাবি ওঠছে।

এদিকে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দাবি ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদের। তিনি এ সংক্রান্ত এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ক্যাম্পাসের স্টেকহোল্ডার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর বাইরে কোনো মাদক ব্যবসায়ী, অনিবন্ধিত দোকানদার কিংবা হকারদের কোনো ইস্যুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। বহিরাগত উচ্ছেদে যাদের পুরনো মাদক ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের সিন্ডিকেট ভেঙে যাচ্ছে, তারা আজ নতুন বয়ান হাজির করার চেষ্টা করল এবং মিছিলেরও আয়োজন করল। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কথা একটাই- হয় ডাকসু থাকবে, নতুবা অবৈধ ব্যবসা-মাদক সিন্ডিকেট থাকবে; দুটো একসাথে চলতে দেব না।

অপরদিকে ডাকসু নেতাদের এধরণের উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি মনে করেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় হকারমুক্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। এ সময় তিনি ভালো কাজে সবাইকে সবার পাশে থাকার আহ্বান জানান। শনিবার রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এসব মন্তব্য করেন রাশেদ খান। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় হকারমুক্ত ও ফুটপাত দোকানিমুক্ত করে নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। যারা হকার ও দোকানি হিসেবে ব্যবসা করতে চান, তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আমি চীনে গিয়ে দেখে এসেছি, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভবঘুরে নেই, যেখানে-সেখানে দোকান ও আড্ডা নেই। পৃথিবীর উন্নত কোনো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মতো নয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের করার পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো আবেগ ও মায়া দিয়ে শৃঙ্খল রাষ্ট্র গঠনে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। বরং দেশের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে পারস্পরিক সহায়তা, সহযোগিতা কাম্য। রাশেদ খান বলেন, শুধু বিরোধী রাজনীতি ও আদর্শিক মতপার্থক্যের কারণে কারো ভালো কাজে কেউ বিরোধিতা করলে দেশ কখনোই উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে না। আসুন, ভালো কাজে সবাই সবাইকে সমর্থন করি।