পার্বতীপুর (দিনাজপুুর) সংবাদদাতা : পার্বতীপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্ধকৃত ম্লিপ ও রুটিন কার্যক্রমের ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৪ শত টাকা কাজ না করেই প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ভুয়া ভাউসার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করে লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে।
পার্বতীপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়-বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে সরকারি বরাদ্ধকৃত প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২শ ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ কোটি ৮লাখ ২৫ হাজার ৪শ ৭৩ টাকা এবং রুটিন বা বিদ্যালয়ের টুকিটাকি মেরামতের জন্য ৩৭টি বিদ্যালয়ে ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। ওই বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকগণ বিগত অর্থ বছরে জুন মাসের শেষের দিকে পার্বতীপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বিদ্যালয়ের কাজকর্ম করা হয়েছে বলে ভূয়া ভাউসার জমা দিয়ে বর্দ্ধাকৃত টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে। প্রতি অর্থ বছরই ওই বিদ্যালয়গুলোতে ম্লিপ কার্যক্রম(বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা) ও রুটিন কার্যক্রম(বিদ্যালয়ের টুকিটাকি মেরামত কার্যক্রম) এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়ে থাকে। কিš‘ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন পর্ষদ যোগ সাজস করে বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়নমুলক পরিকল্পনা ও বিদ্যালয়ের টুকিটাকি মেরামত না করেই শিক্ষা অফিসে ভূয়া ভাউসার জমা করে বিদ্যালয় ভিত্তিক বরাদ্ধকৃত অর্থ আত্মসাৎ বা লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। পার্বতীপুর শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনেও না জানার ভান করে অন্ধ হয়ে বসে আছে। অভিভাবক মহলে প্রশ্ন উঠেছে প্রতি বছরই যদি সরকার বিদ্যালয়গুলোর টুকিটাকি মেরামত বা বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য হাজার হাজার টাকা বরাদ্ধ দিয়ে থাকে, তারপরেও কেন বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও টুকিটাকি মেরামত করা হয় না। এত অর্থ যায় কোথায়? অভিভাবক মহল বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্ধকৃত টাকা আত্মসাৎকারিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানান।
বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানতে পেরে উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে সরেজমিন সত্যতা যাচাই করতে গেলে টাকা আত্মসাতের ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া যায়। বিদ্যালয়গুলো হলো- খামারপাড়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাজনগর ডাঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেউল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মরনাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘনেশ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূর্গাপুর নয়াবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাপুর চরকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খয়েরপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাউপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে বরাদ্ধকৃত অর্থের কোন কাজ করা হয়নি। এ ব্যাপারে খামারপাড়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেশমা বেগমের কাছে দৃশ্যমান একটি কাজ দেখতে চাইলে তিনি বলেন আমি কি কাজ করেছি তা আপনাকে দেখাতে বাধ্য নই। আমি শিক্ষা অফিসে কাজের ভাউসার জমা দিয়েছি। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: ফারুক হোসেন প্রধান শিক্ষকের কাজ না করেই টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গত ১৯ আগষ্ট উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার(এটিও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
খামারপাড়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সহকারী শিক্ষা অফিসার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন-দুই-একদিনের মধ্যে কমিটি মিটিং ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: এনামুল হক সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন-যদি প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ বা লুটপাট করে থাকেন তদন্তে প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।