অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে এবার ছয় দফা দাবিতে গতকাল সোমবারও উত্তাল ছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি)। এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন।

শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় উপাচার্য একেএম ফজলুল হক ভূঁইয়াকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়াসহ ছয় আল্টিমেটাম দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এএইচ এম হিমেল তাদের দাবি-দাওয়া সাংবাদিকদের সাামনে তুলে ধরেন। দাবিগুলো তুলে ধরে হিমেল বলেন, বেলা ২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাহার, হলগুলোতে সব সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ ও হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

এছাড়া হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক কৃষি অনুষদের আসাদুজ্জামান সরকার, তোফাজ্জল, শরীফ, রাফি, বজলুর রহমান মোল্লা, মনির, আশিকুর রহমান ও কামরুজ্জামানসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং অনতিবিলম্বে কম্বাইন্ড ডিগ্রি প্রদানও দাবির মধ্যে রয়েছে বলে জানান হিমেল। ছয়দফা দাবি গৃহীত না হলে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় লকডাউন এবং ব্ল্যাক আউটে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এ প্রতিনিধি। এর আগে দাবি আদায়ে প্রায় দুইশ শিক্ষক কর্মকর্তাকে রোববার দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখাকে কেন্দ্র করে বহিরাগতের হামলায় সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ দশ জন আহত হন।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোববার রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি সব ছাত্র-ছাত্রীদের সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। হল ছাড়ার ওই নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে সকাল ৯টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘কে আর’ মার্কেটে জড়ো হন। পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ছয় দফার আল্টিমেটাম দেন তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল আলীম বলেন, “নির্দেশনা অনেকে মেনে চলে গেছে; আবার অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আন্দোলন করছে। “হল খালি হলে সাধারণত দায়-দায়িত্ব লোকাল প্রশাসনের হাতে চলে যায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গেও কথা বলছি; দেখি কি করা যায়।” বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের নয়টি এবং মেয়েদের পাঁচটি হল রয়েছে। মোট শিক্ষার্থী সাড়ে ছয় হাজারের মতো।

এদিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে চলমান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেছেন, ‘কেন ক্ষমা চাইব? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।’ গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ইস্যু নিয়ে এ কথা জানান। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা আড়াই শতাধিক শিক্ষক আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলো, সেটি আমার প্রশ্ন? ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকেরা প্যানিকড ও ট্রমায় পড়ে যান। পরে কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষীরা তালা ভেঙে বের হতে বাধ্য হন।’