জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইন হত্যা মামলায় দুইজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তারা হলেন-জগন্নাথের শিক্ষার্থী সৈকত হোসেন, তিনি জুবায়েদের ক্যাম্পাসের ছোট ভাই; এবং জুবায়েদের ছাত্রীর মামা ওয়াহিদুর রহমান, তিনি সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দীন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার এসআই আশরাফ হোসেন ওই দুই সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেছিরেন। প্রসিকিউশনের এএসআই শরিফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

সৈকত জবানবন্দিতে বলেন, আমি জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির ২১-২২ সেশনের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী। জুবায়েদ হোসাইন ভার্সিটির বড় ভাই। আমি জুবায়েদ ভাইয়ের ক্লোজ ছোট ভাই হওয়াতে, তার ছাত্রী আমার নাম্বার জোবায়েদ ভাই থেকে নেয়। মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে হাই, হ্যালো কথাবার্তা হত। ২/৩ মাস আগে উনার ছাত্রী আমাকে ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। তখন থেকে বর্ষার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। জুবায়েদ ভাই প্রায় এক বছর যাবৎ ছাত্রীকে বাসায় টিউশন পড়াত।

জবানবন্দিতে সৈকত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকাকালে গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটের দিকে জুবায়েদের ছাত্রী তাকে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দিয়ে বলেন, ভাইয়া কই তুমি। তখন সৈকত জানায় যে, সে ক্যাম্পাসে আছে। ছাত্রী বলে, স্যারের আম্মুর নাম্বার আছে। আমি জানতে চাই কেন কি হয়েছে? মেয়েটি বলে, তার নম্বর লাগবে। ভাইয়ের কিছু হয়েছে কী না জানতে চাইলে তখন ছাত্রী বলে, কে জানি মাইরা ফেলছে। আমি জানতে চাই, মাইরা ফেলছে বলতে? বর্ষা জানায়, খুন করে ফেলছে। আমি বলি, আল্লাহ! কি বলো এসব। তারপর সৈকত ছাত্রীর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এরপর সৈকত বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের ব্যাপারটি জানায়।

ডা. ওয়াহিদুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, গত ১৯ অক্টোবর বাসায় অবস্থান করছিলাম এবং ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রীকে দ্বিতীয় তলার তার চাচাতো ভাই ফোন করে জানায় যে, সিঁড়িতে কোনো একজন লোক পড়ে আছে। তখন ওয়াহিদুর রহমান সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেখেন সিঁড়ির মাঝামাঝি একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়ির লোকজন জড় হয়ে যায় এবং সেখানে শনাক্ত হয় যে, মৃতদেহটি তার ভাগ্নির প্রাইভেট টিউটর জুবায়েদের। তখন তাৎক্ষণিকভাবে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানানো হয় বলে ওয়াহিদুর রহমান জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন তার ভাগ্নির সঙ্গে আরেকটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং জুবায়েদের সঙ্গে প্রেম ছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে জুবায়েদকে হত্যা করে ঘটনার দিন তার ভাগ্নির আগের প্রেমিক দৌড়ে পালিয়ে যায়।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, জুবায়েদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতেন। প্রতিদিনের মত গত ১৯ অক্টোবর বিকালে ছাত্রীকে পড়ানোর জন্য তার বাড়িতে যান। সন্ধ্যায় ওই ছাত্রী জুবায়েদের ক্যাম্পাসের ছোট ভাই সৈকতকে মেসেঞ্জারে বলেন, জুবায়েদ স্যার, খুন হয়ে গেছে, কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটনাটি জুবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনে জানান। এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থল গিয়ে দেখেন, জুবায়েদের রক্তাক্ত লাশ ছাত্রীর বাড়ির তৃতীয় তলায় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে। এরপর ২১ অক্টোবর এনায়েত হোসেন বাদী হয়ে বংশাল থানায় মামলা করেন। তিনি এজাহারে অভিযোগ করেন, ওই ছাত্রী, তার প্রেমিক ও প্রেমিকের বন্ধু পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাল অস্ত্র দিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করেছে। এই তিন আসামি ২১ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।