ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিজেদের তত্ত্বাবধানে হওয়ার পরও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। এটাকে দ্বিচারিতা বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (ইউটিএল)।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডাকসু ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউটিএলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস বলেন, আমার ডাকসু নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ছোটখাটো কিছু ত্রুটি ছিল। তবে নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারে কিংবা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে- পুরো নির্বাচনে এমন কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি ইউটিএলের নজরে আসেনি।

তিনি বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার দুই সপ্তাহ পর কিছু ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষকদের সংগঠন নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা শুরু করেছে। কিছু বক্তব্য ও বিবৃতি ইউটিএলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাধীন রায়কে অসম্মান এবং গণতান্ত্রিক অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়।

অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস আরও বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এক হতাশাজনক বিবৃতি দিয়েছে। জুলাই পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতে সাদা দল নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং ১৮টি হলের মধ্যে ১৬টি হলের প্রভোস্টরা সরাসরি সাদা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের ১০ সদস্যের মধ্যে ৮ জনই সাদা দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন।

এসময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নির্বাচন তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব যখন সাদা দলের শিক্ষকদের হাতে ছিল, তখন নিজেদের বিবৃতিতে দাবি করা নির্বাচনে জালিয়াতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গ দ্বিচারিতা ও দ্বিমুখী আচরণের পর্যায়ে পড়েছে। এতে করে বিবৃতি দেওয়া শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

এসময় ইউটিএলের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। সেগুলো হলো-

১. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উত্থাপিত অযৌক্তিক প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পর কোনো ধরনের নিপীড়ন কিংবা তাদের ম্যান্ডেট কেড়ে নেওয়ার মত কর্মকাণ্ড বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।

২. ঢাবি সাদা দলের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে পরিচালিত নির্বাচনকে সাদা দলের প্যাডে বিবৃতি দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। এই ধরনের বিবৃতি প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এমন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যেসব তৎপরতা দেখা যাচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে।