# নির্ভয়ে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে বললেন ঢাবি ভিসি # নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই বললেন ডিএমপি কমিশনার # দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা ভোট দেবেন ব্রেইল পদ্ধতিতে # ভোট গণনা সরাসরি দেখানো হবে মনিটরে
বহুল আলোচিত এবং প্রতীক্ষার ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ মঙ্গলবার। দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত ডাকসু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আজ পুরো জাতি। ডাকসু নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি রাখছেন বিদেশী কূটনীতিকরাও। নানা কারণেই এই নির্বাচন জাতির জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে। অতীতে যাবতীয় লোক দেখানো নির্বাচনকে পেছনে ফেলে জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যয় নিয়ে নতুন বাংলাদেশের এই নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতার ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী নির্বাচনগুলোর মূল্যায়ন। আপাত দৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন এবং প্রক্রিয়া নিয়ে নিরপেক্ষতার সাথেই কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনের কমিশন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভোট গ্রহণ এবং সঠিক ফলাফল প্রদানের নিমিত্তে আজ সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে সবার সামনে খালি এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সিলগালা করে বুথে স্থাপন করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি প্রদর্শন করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ফলে সুষ্ঠু ভোটের আশা করছেন প্রার্থী ও ভোটাররা।
এবারের নির্বাচনে মোট ৮টি ভোটকেন্দ্রে ৮১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একজন ভোটার গড়পড়তা ১০ মিনিট সময় ব্যয় করে ভোটদান শেষ করতে পারবেন। বিকাল ৪টার মধ্যে বুথে উপস্থিত সকল ভোটারের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে, এমনকি লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদেরও ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে প্রশাসন জানায়। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীর যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ভোটারদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিতে সব বাস সার্ভিসের সময়সূচি অনুযায়ী চলবে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের ব্যাগ, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ, যেকোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, পানির বোতল ও তরল জাতীয় কোনো পদার্থ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে থাকছে নিষেধাজ্ঞা। প্রায় ৪০ হাজার ভোটার ভোট দিতে আসবেন, তা ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তফসিল অনুযায়ী, আজ ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসুর ২৮টি ও হল সংসদ নির্বাচনের ১৩টি মিলিয়ে মোট ৪১টি ভোট দেবেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে গতকাল রাত ৮টা থেকে টানা ৩৪ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে, যা আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ (শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ী ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত) সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন (অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, রোগী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন) ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
ডাকসু নির্বাচনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও ভোট দেবেন। তারা ভোট দেবেন ব্রেইল পদ্ধতিতে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভোট ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং যারা ব্রেইল পড়তে পারেন, তাদের জন্য প্রথমবারের মতো আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ছাপিয়েছি।
আপত্তি নিষ্পত্তি ও সংশোধনের পর এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ২০ হাজার ৮৭৩ জন ছাত্র এবং ১৮ হাজার ৯০২ জন ছাত্রী ভোটার রয়েছেন।
ছাত্র ভোটারদের মধ্যে অমর একুশে হলে ১২৯৫ জন, কবি জসীমউদ্দিন হলে ১৩০৩ জন, জগন্নাথ হলে ২২২২ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৬০৬ জন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ১৯৯৮ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১৭৬২ জন, বিজয় একাত্তর হলে ২০২৭ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১৭৫১ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১৯৫৭ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬৬৪ জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ১৪৯৯ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৩৭৭ জন এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১৪০২ জন রয়েছেন।
এছাড়া, ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে রোকেয়া হলে ৫৬৪১ জন, শামসুন নাহার হলে ৪০৮৪ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২১০৩ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৪৩৪ জন এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২৬৪০ জন আছেন। এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৬২ জন।
ইসলামী ছাত্রশিবির, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বামজোট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের মতো রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে নিজেদের প্যানেল দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও কয়েক শতাধিক।
ঢাবি ভিসির বার্তা
তিন কারণে এবারের ডাকসু নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান জানান, প্রথম কারণ হলো ডাকসু নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি; দ্বিতীয়ত: ডাকসুকে সক্রিয় করা, কারণ এটি গণঅভ্যুত্থানের মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িত; তৃতীয়ত: ডাকসু নির্বাচন বিভিন্ন অংশীজনদেরকে একসঙ্গে করেছে। গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আায়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভিসি বলেন, আমরা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আসছি। সবকিছু পেরিয়ে আগামীকাল (মঙ্গলবার) সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসছে। নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব টিম রয়েছে। এর মধ্যে বিএনসিসি, রোভার স্কাউটসসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা থাকবে।
নির্বাচনের তথ্য প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার আমরা সব তথ্যের প্রবাহ উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। সব কিছুই ক্যামেরার (সবার) সামনে হবে। ভোট গণনার দৃশ্য ভোট কেন্দ্রের বাইরের এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে। আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। নানা অভিযোগ থাকে হল কেন্দ্রিক নির্বাচন হলে, সেটি আমরা এড়িয়ে গেছি। এবার প্রথমবারের মতো হল থেকে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন জনের মতামত নেওয়া হয়েছে। সবার অংশগ্রহণের চেষ্টা করা হয়েছে। ভিসি বলেন, জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে হার-জিত থাকবে। যিনি হারবেন বা জিতবেন, সবাই ভূমিকা পালন করবেন। যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়।
ডাকসু নির্বাচন একটি জটিল প্রক্রিয়া মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর আটবার নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। এবার আমাদের সবার আকাক্সক্ষা ডাকসুকে কার্যকর করা। কেউ বিশৃঙ্খলা করবেন না। কেউ দ্বন্দ্ব বা সংঘাতে জড়াবেন না। ডাকসু নিয়ে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে, মানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চাই। আমি বিশ্বাস রাখি, সুষ্ঠুভাবে সবকিছু সম্পন্ন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ।
বন্ধ থাকবে মেট্রো স্টেশন
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে গতকাল সোমবার বিকেল থেকে বন্ধ হয়ে যায় ঢাবি মেট্রো স্টেশন। এদিন বিকেল ৪টা থেকে ও ৯ সেপ্টেম্বর পুরো দিন স্টেশন বন্ধ থাকার কথা জানিয়ে দেয় মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএলের এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনসংলগ্ন যাতায়াতের জন্য বিকল্প পন্থা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। এবারের নির্বাচন হচ্ছে ৩৮তম বারের মতো। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়। তবে সে নির্বাচনও হয় উচ্চ আদালতের রায়ের পর। ওই নির্বাচনে ভিপি (সহসভাপতি) হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর এবং জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ভিপি নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহবুর জামান। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১৯ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হয় মাত্র ৭ বার। এরপর ১৯৯১ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচন যেন অতীত হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন, বিক্ষোভ, ধর্মঘট করে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। এরপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় ২০১৯ সালে হাইকোর্টের একটি রায়ে ডাকসু নির্বাচনের পথ খোলে।
আইডি হ্যাক প্রার্থীদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের দিন শীর্ষ প্রার্থীদের আইডি ডিজেবল হওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে রীতিমতো। এবার শিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম ও এজিএসপ্রার্থী মহিউদ্দিন খানের আইডি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েমের অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হওয়ার অভিযোগ করে শিবিরের নেতাকর্মীরা। এদিকে মহিউদ্দিন খানের অ্যাকাউন্টও এখন খুঁজে পাওয়া যায়নি। একই প্যানেলের গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী সাজ্জাদ হোসাইন খানের অ্যাকাউন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানা যায়।
এরপর শেখ তানভীর বারী হামিমের আইডিও বিকল হয়, যদিও তিনি পরে তা ফিরে পেয়েছেন। তাদের আইডি যাওয়ার বিষয়টা ফেসবুকে জানান তানভীর আল হাদী মায়েদ। এরপর তার আইডিও ডিজেবল হয়ে পড়ে।
(ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ভেরিফায়েড আইডি নাই হয়ে গেছে। প্রমাণাদি দিয়ে প্রাথমিকভাবে ফিরে পেলেও একটি পোস্ট করার পর আবারও ডিজেবল করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে আদৌ আইডি ফিরে পাব কি না জানি না। অথচ এই আইডিতে আমি নির্বাচনি প্রচারণা চালাতাম, যেখানে প্রচুর রিচ হতো। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, নৈতিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে আমাদের ওপর সাইবার আক্রমণ চালানো হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনংযোগ বিভাগ জানিয়েছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সাইবার অপরাধে ছাড় নেই। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্রচারণাকালে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতীতের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাইবার বুলিং এবং ব্যক্তিগত চরিত্রহননের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষত ছাত্রী প্রার্থীদের নিয়েও নানাভাবে সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। যা মানবাধিকার পরিপন্থি।
সেখানে আরও যোগ করা হয়, ‘কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ কর্তৃক গঠিত ডাকসু আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স এবং সাইবার নিয়ন্ত্রণ সেলের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাইবার বুলিং কিংবা অপপ্রচারের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
এবিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. জসীম উদ্দিন জানান, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে, ভোটের দিন পরিস্থিতি কতটা শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং শেষ মুহূর্তে কারা এগিয়ে যাবে। সব মিলিয়ে প্রচারণার কোলাহল থেমে গেলেও ডাকসু নির্বাচনের আগের দিন ক্যাম্পাস সরব নানা জল্পনা-কল্পনায়।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাজনিত কোনও শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী। নির্বাচন সুষ্ঠু রাখতে ক্যাম্পাসে নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ডিএমপির অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
ডিএমপি কমিশনার জানান, ২ হাজার ৯৬ জন পুলিশ, ডগ স্কোয়াড, সোয়াট টিম, বিশেষায়িত টিম, সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনও শঙ্কা নেই।
সাজ্জাদ আলী বলেন, বহুল আলোচিত ডাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত এক সপ্তাহ ধরে নানা পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আশা করছি, বড় কোনও ঘটনা ঘটবে না। ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু থাকবে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে। গত এক মাস ধরে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তিনি জানান, ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি চেকপোস্ট চালু আছে, কেন্দ্রকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, মোবাইল পেট্রোল, ডগ স্কোয়াড, বিশেষায়িত টিম, বোম এক্সপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, ডিবি (সাদা পোশাক), সিসিটিভি মনিটরিং সেল, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স থাকবে। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন থেকে ইউনিফর্মধারী ১ হাজার ৭ শত ৭১ জন নিয়োজিত আছেন, আগামীকাল তা বেড়ে হবে ২ হাজার ৯৬ জন। এর বাইরে সাদা পোশাকে ডিবি, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা থাকবেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাত ৮টা থেকে ১১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইসেন্সধারী ব্যক্তিরাও অস্ত্র বহন করতে পারবেন না। আমি আমার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা জারি করলাম। আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটার ও অন্য যে কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেন। যদি অবাঞ্ছিত কেউ ঢোকে তাহলে তাকে যেন পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ছোট ঘটনা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেন অবহিত করা হয়। আগামীকাল নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা রাখছি। জাল আইডি কার্ড বানানো বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া চলমান রয়েছে।
সাইবার বুলিং বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা অত্যাধুনিক যুগ পার করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক শক্তিশালী যে বিকৃত ঘটনা আসছে, আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি।