রাবি রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশিষ্ট আলোচকগণ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নির্লিপ্ততার কোনো অবকাশ নেই। পুরো জাতিকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ঢাকা’র সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই সেমিনার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব। সভাপতিত্ব করেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক ফজল। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক সরদার আবদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক মেহেদী হাসান পলাশ। আলোচনায় অংশ নেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাবি’র সাবেক উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন ম-ল, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. শাহাব এনাম খান, রাজশাহী বার এসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবুল কাসেম, রাবি’র পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক ড. এম নজরুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞানী ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী, রাবি ছাত্রউপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মুরশিদা ফেরদৌস, বিশিষ্ট সমাজসেবী তৌফিকুর রহমান লাভলু, রাজনীতিক মোবাশে^র আলী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কবি ও গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিন।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা এবং অশান্তির মূল কারণ হলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক। যার যতটুকু স্টেজ, তাকে ততটুকু জায়গা দিতে হবে এবং সকলের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বাংলাদেশী, বাংলাদেশী হিসেবে যেসব অধিকার আমাদের আছে সেসব অধিকার সকল নাগরিকেরই রয়েছে।’ চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, ‘তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা চেয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হয়। তাই ঐ সময়ে প্রতিবাদস্বরূপ ‘ব্ল্যাক ডে’ পালন করা হয়। পরবর্তীতে জিএসএস (জনসংহতি সমিতি) গঠিত হয় এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সদিচ্ছা প্রকাশ করেন এবং নানা সুবিধা প্রদান করা শুরু হয়। তবে, আজো এই অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে আলোচনা হয়-তারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে কি না, অথবা কতটুকু পাচ্ছে।’ মূলপ্রবন্ধে সরদার আবদুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক বিস্তীর্ণ ভূমিকে কেবলই নান্দনিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের সমাহার কিংবা পর্যটন স্পট হিংসেবে বিবেচনা করা মস্ত বড় অবিবেচকের কাজ হবে। একে একাধারে জাতীয় নিরাপত্তার লৌহ প্রাচীর হিসেবে দেখতে হবে। একইসঙ্গে বহু মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের আধার হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। এর চারপাশের বিচিত্র সীমানা এবং পরদেশের ভূমির সংযুক্তি পার্বত্য এলাকাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা চলমান। ১৯৭৯-৮৯ সালে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংঘাতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারতীয় ইন্ধনে সৃষ্ট সংঘর্ষের পেছনে ছিল সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলের বিদ্রোহ দমন ও বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টির অভিপ্রায়। ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে অস্ত্র বিরতি হলেও এখনো জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফসহ সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয়। বাঙালি অধিকার খর্ব, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, হত্যার মাধ্যমে অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধানের আলোকে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত, উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শিক্ষাবিস্তার, সংলাপ ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় অবস্থান নিশ্চিত করাই পার্বত্য শান্তি ও জাতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য।’ তিনি বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় ভূমিকে রক্ষায় তিনি ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ আজ যে আদিবাসী দাবি করছে, এর পেছনে রয়েছে এক রাষ্ট্রঘাতী ষড়যন্ত্র। সেখানে ছয়টি সন্ত্রাসী গ্রুপ অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে সারা দেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। সেই দিক থেকে এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণে আমরা বাংলাদেশী। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ইঞ্চি মাটি আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও তার সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের আলাদা করে চিন্তা করতে হবে। আদিবাসী বা উপজাতি নয় আমাদের সকলকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় গর্বিত হতে হবে।’