রাবি রিপোর্টার: আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আয়োজিত রাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদায় না হলে অনির্দিষ্টকাল পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এই কর্মসূচির ফলে রাকসু নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
শিবিরের ৭ দফা ঘোষণা
ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর প্যানেল থেকে ৭ দফা দাবি দিয়েছি। তার মধ্যে অন্যতম, কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা, সাংবাদিকদের জন্য পৃথক কার্ডের ব্যবস্থা করা, ত্রুটিমুক্ত ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা, ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা, ভোট গণনা প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো ইত্যাদি। আশা করি, নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে।”
দাবির মধ্যে আরো আছে, কোনো প্রার্থী প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে আপত্তি করলে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার ব্যবস্থা রাখা, প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা, ভোটের দিন ক্যাম্পাসে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা এবং নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা একটি সুশৃঙ্খল নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছি। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির যে দাবিগুলো জানিয়েছে, সেগুলো আমরা গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে যেগুলো নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।”
শিক্ষকদের কর্মসূচি
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল বৈষম্য দূরীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাসহ (পোষ্য কোটা) তিন দফা দাবি ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদায় না হলে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঠিক চার দিন আগে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবেন তারা। গতকাল বুধবার মঙ্গলবার ভিসি বরাবর দেয়া এক স্মারকলিপিতে এই দাবি জানিয়েছেন তারা। ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের মধ্যে দাবিগুলো মানা না হলে আগামী রোববার থেকে পূর্ণদিবস কর্মসূচি পালন করা হবে। ইতোমধ্যে তিন দফা দাবি সংবলিত এ চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন তারা। এতে জানানো হয়, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম (জরুরি সেবা ব্যতীত) বন্ধ থাকবে। তাদের তিনটি দাবি হলো- প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) অবিলম্বে বাস্তবায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত সকল ‘প্রশাসক প্রথা’ বাতিল এবং সকল শিক্ষকের জন্য ব্যক্তিগত চেম্বারের সুব্যবস্থা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি। এর মধ্যে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এই ধরনের কর্মসূচি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষক-কর্মকর্তারা দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন। তবে শিক্ষকরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা জানিয়েছেন, রাকসু নির্বাচনের সঙ্গে এ আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সুবিধা বহাল আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কার্যকর না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কর্মসূচি দিতে হচ্ছে।” রাকসু নির্বাচনে প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলনের কারণে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। আর প্রশাসন যদি এর আগেই আমাদের দাবি মেনে নেয়, আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো।”