জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ছাড়া আবাসিক হলের পাশে চারুকলা বিভাগের একাডেমিক ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বারবার শিক্ষার্থীরা হলের পাশে ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবি জানালেও জোরপূর্বক কাজ শুরুর চেষ্টা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১৪ মে) বিকালে চারুকলা ভবন নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে লোহার খুঁটি ও টিনের বেষ্টনী দেওয়া সংরক্ষিত গেট ভেঙে সেখানে গাছ লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
তারা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের দাবিকৃত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের আগেই ভবন নির্মাণ শুরু হলে তা হবে একটি পরিবেশবিধ্বংসী ও অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। এছাড়া আবাসিক হলের পাশেই একাডেমিক ভবন নির্মাণ অনেক জটিলতার সৃষ্টি করবে। হলের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হবে বলে দাবি করেন তারা। এছাড়া উক্ত স্থানটি লেকের পাড় সংলগ্ন হওয়ায় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য ও পরিযায়ী পাখিদের জন্য হমকির কারণ হবে বলে দাবি করেছে বামপন্থীদের একটি অংশ। উক্ত ভবন নির্মাণ প্রকল্পে জালিয়াতির অভিযোগও করেছেন তারা।
শহীদ সালাম বরকত হলের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল মোমেন জানান, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়েই এই জায়গায় ভবন নির্মাণের চেষ্টা চালানো হয়। ছাত্রদের গণস্বাক্ষর ও ধারাবাহিক আন্দোলনের পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ওঠে। সেখানে পরিবেশ ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় জায়গা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “সেই সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তের পরও কেন আবার আগের স্থানে নির্মাণ কাজ শুরু হলো?”
তিনি আরও জানান, “গত ১৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শহীদ সালাম বরকত হলের শিক্ষার্থীরা আজকে গাছ রোপণ করে স্থানটিকে উন্মুক্ত রাখতে চায়। কিন্তু চারুকলা বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী উল্টো আমাদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে কটুক্তি করে।”
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণে গত তিন দশকে ২৮ শতাংশ জলাশয় ও স্থলভূমি হারিয়ে গেছে। এই জায়গায় প্রায় ৫০০-এর বেশি গাছ ছিল। লেক পাড়ে বহুতল ভবন নির্মিত হলে তা পাখিদের জন্যও হুমকি হবে। কলার এক্সটেনশন হলে এবং লেকচার থিয়েটার হল নির্মাণ সম্পন্ন হলে শ্রেণিকক্ষ সংকটও মিটে যাবে। তাই মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া ভবন নয়।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর ইসলাম ইমন বলেন, “এই প্রকল্পে ডিপিপি জালিয়াতি, ইআইএ না করা, ছাত্রলীগের মাধ্যমে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। আমরা চাই, আলোচনার মাধ্যমে টেকসই ও অংশীজনভিত্তিক পরিকল্পনা হোক।