জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মর্মান্তিক এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
আজ রবিবার (২২ জুন) সকাল ১১টায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
ইতিহাস বিভাগের ছাত্রসংসদের ভিপি মো. শাকিল হোসাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিওসহ পোস্টে জানান, গতকাল (২১ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জোবায়ের প্রচণ্ড বুকব্যথা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যান। সে সময় কান্নাভেজা কণ্ঠে নিজেই ফোন করে বলেন, “ভাই, আমি ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই। আমার ক্যাম্পাসের অ্যাম্বুলেন্স দরকার।” কিন্তু শতবার চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেবা থেকে কোনো কার্যকর সহায়তা পাওয়া যায়নি।
দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার তাকে জানান, অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট এবং ঢাকায় পাঠানো সম্ভব নয়। ড্রাইভার ইসরাফিলকেও একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি কেবল আশ্বাস দেন—ফলে জোবায়েরকে চার ঘণ্টা যন্ত্রণার মধ্যে অপেক্ষা করতে হয়। এই দীর্ঘ অবহেলার পরিণতিতেই আজ সকালে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
একই পোস্টের মন্তব্য ঘরে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুসমিতা বিনতে লিখেন, “কত যন্ত্রণায়, কত অবহেলায় চলে গেলো ছেলেটা। জাবির অ্যাম্বুলেন্সে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ট্রিপ চলে, অথচ একজন শিক্ষার্থী বারবার মৃত্যুর মুখে পড়েও সহায়তা পায় না। গতকাল অ্যাম্বুলেন্সগুলো কোন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজে ব্যস্ত ছিল, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. শামছুর রহমান জানান, “জোবায়েরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। প্রায়ই তাকে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। গতকাল যখন সে অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিল, তখন আমাদের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি অন্য একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে গিয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্স ফিরেই আমরা তাকে আনার চেষ্টা করি।”
জোবায়েরের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোকের ছায়া। আজ বিকাল ৩টায় ১০ নম্বর হল সংলগ্ন মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জুবায়েরের মৃত্যু আমাদের কাছে প্রশ্ন রেখে যায়—কেন বারবার এমন অবহেলা? কেন জরুরি মুহূর্তে পাশে থাকে না বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা?