বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক ৯ দফা দাবির ৭ নম্বর দফা ছিল ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ সক্রিয়করণ। এই দাবির প্রতি শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমর্থনই প্রমাণ করে যে, ছাত্র-অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ছাত্র সংসদ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সেই দাবির বাস্তবায়নের দিকে এক বড় অগ্রগতি। ফলে অনেকেই মনে করছেন, জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন হতে পারে একটি কার্যকর ও অংশগ্রহণমূলক জাকসু নির্বাচন।
এদিকে দীর্ঘ ৩৩ বছরের অচলায়তন ভেঙে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তফসিলকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে আশাবাদ ও শঙ্কা—দুই-ই দেখা দিয়েছে। কেউ এটিকে ছাত্র রাজনীতির পুনর্জাগরণ হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ মনে করছেন—দলীয় লেজুড়বৃত্তির কাছে আবারও মাথানত করবে প্রাণের জাকসু।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “অনেকেই ভাবছেন জাকসু দলীয় লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করবে। কিন্তু জাকসু নির্বাচন করার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবল দলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্যদের দ্বারা জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে দলীয় প্রার্থীদের মতো ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন। তাই আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিই আবার জয়ী হবে।”
এই আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আহসান লাবীব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যার অন্যতম উৎস লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে এই আধিপত্য কমবে। গণরুম সংস্কৃতি, সাবেক ছাত্রদের প্রভাব ইত্যাদি কমাতে হলে প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বের বিকল্প নেই। প্রশাসন নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করুক—এটাই প্রত্যাশা।”
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, “দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে তফসিল ঘোষণা হয়েছে, এ জন্য আমরা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। তবে আমরা চাই, এই নির্বাচন যেন ২০১৩ সালের মতো মাঝপথে থেমে না যায়। প্রশাসনকে অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র মালিহা নামলাহ বলেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন যেমন শিক্ষার্থীদের দাবি, তেমনি আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের বিচারও জরুরি। একটি দাবি অন্য দাবিকে খর্ব করতে পারে না। উভয় দাবিই দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরা বদ্ধপরিকর। জাকসু নির্বাচন সেই অধিকার প্রতিষ্ঠারই অংশ। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর তফসিল ঘোষণা হয়েছে—আমরা চাই এটি যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়।”
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উদ্দিন বলেন, “জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর আমরা আশা করেছিলাম খুনি হাসিনার দোসরদের বিচার এবং জাকসু নিয়মতান্ত্রিকভাবে হবে। কিন্তু মৌলিক দাবিগুলোও প্রশাসনকে আন্দোলন করে আদায় করাতে হচ্ছে। তারপরও তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানাই এবং হামলাকারীদের বিচার ও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানাই।”
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রত্যাশিত জাকসু নির্বাচন।