এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ১৯ শতাংশ। ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। পাঁচ বছর পর এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে। এজন্য ফলাফল নিম্নমুখী বলে মনে করেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে অতিরঞ্জিত ফল এড়াতে গ্রেস মার্কস (বাড়তি নম্বর) দেওয়া পরিহার করার নীতি অবলম্বনে শিক্ষার্থীদের ফল খারাপ হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর দেশের ৯টি সাধারণ, কারিগরি ও মাদরাসা বোর্ডসহ মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছর (২০২৪) পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সে হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সব শিক্ষা বোর্ড থেকে একযোগে এ ফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বোর্ডের ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারবেন।
এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ ছাত্রী। সারাদেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। তবে এ পরীক্ষায় প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার অংশ নেন ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ফেল করেছেন ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন। গড় ফেলের হার ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এবার সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন। পরীক্ষার ফলাফলে এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে সব দিক দিয়ে এগিয়ে ছাত্রীরা। এ বছর পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন। আর ছাত্র ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন। ছাত্রীদের গড় পাসের হার ৬২.৯৭ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৫৪.৬০ শতাংশ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৬৯ হাজার ৯৭ জনের মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ জন এবং ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছরের আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সারাদেশে গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ২৬৮ জন।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছরের এইচএসসি (ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সারাদেশে গড় পাসের হার ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬১০ জন। অতীতের ফল বিম্লেষণ: গত ১০ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ২০২০ সালে (অটোপাস) ১০০ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০০২ সাল পর্যন্ত ডিভিশন পদ্ধতি অর্থাৎ, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ছিল। ২০০৩ সাল থেকে জিপিএ পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে পাঁচটি স্কেলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। নতুন এ পদ্ধতি চালুর পর শিক্ষার্থীদের বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে।
জিপিএ পদ্ধতি চালুর প্রভাব পড়ে ২০০৩ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে। সে বছর পাসের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০০৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশে। এরপর থেকে পাসের হার ক্রমেই বাড়তে থাকে।
২০০৫ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছিলেন ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া ২০০৬ সালে পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৬৫, ২০০৭ সালে ৬৫ দশমিক ৬০, ২০০৮ সালে ৭৬ দশমিক ১৯, ২০০৯ সালে ৭২ দশমিক ৭৮, ২০১০ সালে ৭৪ দশমিক ২৮, ২০১১ সালে ৭৫ দশমিক ০৮, ২০১২ সালে ৭৮ দশমিক ৬৭, ২০১৩ সালে ৭৪ দশমিক ৩০, ২০১৫ সালে ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এরপর ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০১৯ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সে বছর ফরম পূরণ করা সব শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়া হয়, যেটিকে অটোপাস বলা হয়। অর্থাৎ, ২০২০ সালে পাসের হার হয় ১০০ শতাংশ।
করোনার কারণে এরপর কয়েক বছর কখনো সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, কখনো চার বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষা হয়। সে বছর পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সবশেষ ২০২৪ সালে পূর্ণ নম্বর, পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণ সময়ে ফেরে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। তবে কয়েকটি পরীক্ষা হওয়ার পর শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। এতে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সরকার পরিবর্তনের পর আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি করে পরীক্ষা আর না নেওয়ার জন্য শুরু হয় আন্দোলন। তাতে বাধ্য হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করে। ওই বিষয়গুলোর পরীক্ষা না নিয়ে এসএসসির ফলাফল বিবেচনা করে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল প্রকাশ করা হয়। এতে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি: অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয় বরং ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল। পাশের হার সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদ-। ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আজ আমি এবং আমরা এই মন্ত্রণালয় সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।
গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় শিক্ষা সচিব রেহেনা পারভীনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের তুলনায় পাসের হার ২০ শতাংশ কমেছে, সেটা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমাদের করার কী ছিলো? তাহলে কী আমরা নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে..., অতীতে যে রকম হয়েছে বলে আমরা জানি। মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়ার কথা, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষকরা সময় নিয়ে খাতা দেখেছেন। শিক্ষকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা যেটা প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষকরা সেটা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে জিপিএ-৫ এর প্রতিযোগিতা চলছে। যিনি যোগ্যতা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন, আর যাকে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে জিপিএ-৫ দেওয়া হচ্ছে; এতে যোগ্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে, না কি? বাস্তবতাটা কঠিন, এটা ঠিক। চলেন আমরা সবাই মেনে নেই।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয় বরং ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়। কারণ আজ যদি আমরা সাহস করে বাস্তবতাকে স্বীকার না করি তাহলে মেধাবীদের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি আমরা অন্যায় করবো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় হিসেবে আমরা কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারি না এই ফলাফলের জন্য।
তিনি বলেন, এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনেক বিস্মিত। পাশের ঘর এবং জিপিএ-৫ বেশি নেই, প্রশ্ন উঠেছে কেন? এর উত্তর জটিল নয় বরং সহজ, কিন্তু অস্বস্তিকর। বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব শুরুর দিকে। প্রাথমিক স্তর থেকেই ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টা হিসেবে আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক। যে ফলাফল শিক্ষার্থীর শেখাকে সত্যিকারের মূল্যায়ন করে সেটি হোক আমাদের সাফল্যের মানদ-। এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে উদ্বেগ উঠেছিল, আমি তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছি। আমরা সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি যেন ভবিষ্যৎ পরীক্ষায়, বিশেষ করে এইচএসসি মূল্যায়নে সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে যেন ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয়।
তিনি বলেন, আমরা যা করছি, আমরা সমমূল্যায়ন এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি স্বতন্ত্র পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা শিক্ষাবিদ, গবেষক, নীতি নির্ধারকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করছি। যারা ডেটা বিশ্লেষণ করে শেখার মূল ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবেন।
আমাদের উদ্দেশ্য অভিযোগ নয়, সমাধান বলে দেওয়া উল্লেখ করে ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, আগামী সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় শিক্ষা পরামর্শ সভার আয়োজন করছে। যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। আমরা সবাই মিলে প্রশ্ন করবো কী ভুল হচ্ছে, কেন হচ্ছে এবং কীভাবে বদলানো যায়। আমরা বোর্ডগুলোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যাচাই করার জন্য র্যান্ডম স্যাম্পল অডিট শুরু করেছি। সীমান্তরেখায় থাকা স্ক্রিপ্টগুলো, পরীক্ষার খাতাগুলো বেছে নিয়ে স্বাধীনভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। উদ্দেশ্য শাস্তি নয়, শেখা। কীভাবে মান উন্নত করা যায় তা বোঝা।
তিনি বলেন, আমরা মার্কিং রুব্রিক ও মডারেশন প্রটোকল পর্যালোচনা করছি, যেন ভবিষ্যতের পরীক্ষায় শিক্ষকরা আরও একীভূত মানদ-ে মূল্যায়ন করতে পারেন। এর জন্য রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালুর সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে, শেখার মান যাচাই করতে আমরা আন্তর্জাতিক রেফারেন্স ফ্রেমওয়ার্কগুলোকে দেখছি।
স্বাভাবিক ধারায় ফেরায় ফলাফল নিম্নমুখী: পাঁচ বছর পর এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে। এজন্য ফলাফল নিম্নমুখী বলে মনে করেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে অতিরঞ্জিত ফল এড়াতে গ্রেস মার্কস (বাড়তি নম্বর) দেওয়া পরিহার করার নীতি অবলম্বনে শিক্ষার্থীদের ফল খারাপ হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, এবার আমরা স্বাভাবিক পরীক্ষার ধারায় ফিরেছি। পূর্ণ সিলেবাস, পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে হয়তো শিক্ষার্থীরা মানিয়ে নিতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, দেখুন, আমরা কিন্তু চাই না একজন পরীক্ষার্থীও ফেল করুক। তবে শিক্ষার মান যে তলানিতে নেমেছে; অতিরঞ্জিত যে ফলাফল বিগত বছরগুলোতে দেখানো হয়েছিল, তাতে ক্ষতি হয়ে গেছে। সেখান থেকে ফিরে আসতে তো হবে। এটা করতে গেলে কোথাও না কোথাও আপনাকে থামতেই হবে।
মানবিকে অর্ধেকের বেশি ফেল, ৫৭ শতাংশই ছাত্র: এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বেশি ফেল করেছেন মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীরা। এ বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি (৫১ দশমিক ৫৫ শতাংশ) ফেল করেছেন। ফেল করাদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা বেশি।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ফেল করেছেন ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে সাধারণ ৯টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।
সাধারণ ৯টি বোর্ডে শুধু মানবিক বিভাগ থেকে ফেল করেছেন ৫১ দশমিক ৫৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী। এ বিভাগের ছাত্রদের ফেলের হার ৫৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ, এবার মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রতি ১০০ জন ছেলে শিক্ষার্থীর ৫৭ জনই ফেল করেছেন।
ছেলেদের চেয়ে মানবিকের মেয়েদের ফেলের হার কিছুটা কম। ছাত্রীদের পাসের হার ৫৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আর ফেল ৪৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ মানবিক বিভাগের প্রতি ১০০ জন ছাত্রীর মধ্যে ৪৬ জন ফেল করেছেন।
ফলাফলে দেখা যায়, মানবিক বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ৩১ হাজার ৯৪৯ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৬৫ হাজার ২৫০ জন। গড় পাসের হার ৪৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ফেল করেছেন ৬৬ হাজার ৬৯৯ জন। ফলে গড় ফেলের হার ৫১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বিজ্ঞান-বাণিজ্যেও ছাত্ররা বেশি ফেল: বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৯৪ হাজার ৯৭ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৮০ হাজার ৭৬১ জন। বিজ্ঞানে গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৮৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, ছাত্রীদের পাসের হার ৮৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বা বাণিজ্য বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬৬ হাজার ১১৪ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৪২ হাজার ৭৭২ জন। গড় পাসের হর ৬৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রদের পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের ৭০ দশমিক ৭২ শতাংশ।