জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

দীর্ঘ তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন উৎসুক, তখন ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় রয়েছে—সংগঠনগুলো মধ্যকার দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রার্থী বাছাই নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বই বিলম্বের মূল কারণ। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমাদানের দিন পেরিয়ে গেলেও প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি ছাত্রদল।

ছাত্রদলের অভ্যন্তরীন সূত্রে জানা যায়, ‘বুধবার (২১ আগস্ট) বিকাল থেকে জাকসুর প্যানেল নির্ধারণ করতে মিটিং শুরু করে ছাত্রদল। সেই মিটিং সকাল সাতটা পর্যন্ত চলতে থাকে। এসময় মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটর সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া সহ শাখা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। মিটিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন গনিত বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন, সিনেট সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন।

মিটিংয়ে শীর্ষ পাঁচ নেতা ও বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের মধ্যে পদ নিয়ে দরকষাকষি হয়। এসময় বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা সহ-সভাপতি পদ অথবা সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সাধারণ পদ দাবি করেন। বিদ্রোহীদের এই দাবি মেনে নেয়নি শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ পাঁচ নেতা। এসময় বিদ্রোহী নেতাদের সাথে আলোচনায় বসেন উপস্থিত বিএনপি পন্থী কয়েকজন শিক্ষক। তবে সেই আলোচনা তেমন ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানা গেছে।

গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদলের মিটিংয়ে জাতীয়তা শিক্ষক ফোরামের সদস্য হিসেবে আপনি উপস্থিত ছিলাম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ দিয়েছি। তবে কারো জন্য সুপারিশের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দীন মোহাম্মদ বাবর দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের প্যানেল গুছানোর কাজ সম্পন্ন করেছি। কেন্দ্রীয় সংসদের অনুমোদন পেলেই খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করা হবে।

তবে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা মনে করছে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দ্রুত প্যানেল ঘোষণা করতে না পারলে ভোটের মাঠে পিছিয়ে পড়বে ছাত্রদল।

জাকসুকে সামনে রেখেই গত ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়ে বর্ধিত ও হল কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই কমিটিতে পদপ্রাপ্ত অনেককে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হল কমিটিতে রাখা হয় সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী, মাদক ও ছিনতাইয়ে বহিষ্কৃত, ভ্রুণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত সহ নানা বিতর্কিতদের। কমিটি ঘোষণার পরই প্রতিবাদ মিছিল বের করেন শাখা ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। সেই থেকে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পাঁচ নেতাকে প্রায় নয় দিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়।

গত ১৭ আগস্ট ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের সুপার ফাইভের সেদিন নানা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর থেকে সুপার ফাইভ এবং বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায় শাখা ছাত্রদল।