অবশেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিল সরকার। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। অনশনস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা বাজেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সব কিছু করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টা কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে এ সিদ্ধান্ত জানানো হলো। এদিকে আজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটডাউন তুলে নিয়ে সকল ক্লাস ও পরীক্ষা চলবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার কাছে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকেল চারটার দিকে তাদের অনশন শুরু হয়। কর্মসূচি শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ ভূইঁয়া।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ক্যাম্পাস থেকে এসেছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে ফিরব না। এই মুহূর্ত থেকে আমাদের গণঅনশন শুরু হলো। কাকরাইল মোড় থেকে যমুনার দিকে যেতে সড়কের ডানপাশে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে শিক্ষার্থীদের একাংশ অনশনে বসেন। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের স্লোগান স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা অভিমুখী কাকরাইল মোড়ে।
শুক্রবার সকাল থেকে দাবি আদায়ের আন্দোলনে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে সমাবেশে দলে দলে যোগ দেন জবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই কমিটি ও নানা জায়গায় অবস্থান করা সাবেক জবিয়ানরা সমাবেশে যোগ দেন। তারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে আমরা আপসহীন। সাবেক জবিয়ানদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পানি, কেক, কলাসহ নাস্তা সরবরাহ করা হয়।
চলমান আন্দোলনের তৃতীয় দিন শুক্রবার সকাল থেকে ৫০টির মতো বাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষার্থীদের চার দফা: দাবিগুলো হলো- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশদের বিচারের আওতায় আনা।
পরিকল্পনা উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া : এদিকে, জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এদিন বিকালে দেয়া তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার পর অনেক সময় চলে গেলেও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টিকে চরম অবহেলা করা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আছে। গত বছর নবেম্বর মাসে এ নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে আমার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছিল। সে সময় শিক্ষার্থীদের জানা ছিল না যে, ইতোপূর্বেই শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বউদ্যোগে একনেক সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস কেরানীগঞ্জে নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়’।
‘একনেক-এর সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল অধিকৃত ভূমিতে একটি সুপরিকল্পিত, দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক মানসম্পন্ন ক্যাম্পাসের জন্য ভবনগুলো ও অন্যান্য অবকাঠামো সম্বলিত একটি মাস্টার প্ল্যান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তৈরি করবে’। কাজে বিলম্বের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাকালে যেসব চলমান নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে ঠিকাদার চলে গিয়েছিল, সেগুলোর কাজ শেষ করতেও বলা হয়। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কাছে কাজটি দেওয়ার বিষয়ে কোনো অসুবিধা নাই বলে জানানো হয়। এসব কাজে বিলম্ব হচ্ছে কেন- তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি খতিয়ে দেখবে বলে আশা করি’। ইতোমধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রমের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প অর্থাৎ মাস্টার প্ল্যান বা মাস্টার প্ল্যানের অধীনে নির্মাণ প্রকল্পের অংশ বিশেষ যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হলে একেনেকের দ্রুত অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হবে। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। আশা করি সব পক্ষের সহযোগিতায় সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। ইতোমধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রমের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে’।
শাহবাগ থানার সামনে শিক্ষার্থীরা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা শাহবাগ থানা ঘেরাওয়ের পর তারা এই আলটিমেটাম দিয়ে সরে যান।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শাহবাগ থানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেন তারা। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আবারও শাহবাগ থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে আসেন। পরে সেখান থেকে তারা সাম্য হত্যার ‘অগ্রগতি’ জানতে শাহবাগ থানায় যান। এ সময় তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাবির কয়েকজন শিক্ষকও। শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মুন্সী বলেন, এটি একটি নির্দলীয় ব্যানার। সাম্যর লাশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল টালবাহানা শুরু করেছে। তাদের মুখ্য দাবি বিভিন্ন জনের পদত্যাগ। কিন্তু আমাদের প্রধান দাবি, সাম্য হত্যার বিচার। সাম্য হত্যার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তাকে যে ছুরিকাঘাত করেছিল, তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাকি দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার না করতে পারলে আমরা শাহবাগ থানা ঘেরাও কর্মসূচি দেবো।